আচরণের মূলে চারটি ভাগ রয়েছে। ভাগগুলো হলো;
১) আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সাথে আচরণ।
২) নিজের সাথে আচরণ।
৩) সৃষ্টির সাথে (যেমন, জনগণ) আচরণ।
৪) পৃথিবীর সাথে আচরণ।
এর প্রত্যেকটি আবার সাতটি নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত।
১) আল্লাহ সুবহানাহু
ওয়া তায়ালার সাথে আচরণের সাতটি নীতি হলো;
ক. তাঁকে তাঁর প্রাপ্য দেওয়া।
খ. তাঁর (আদেশ নিষেধের) সীমানা রক্ষা করা।
গ. তাঁর নেয়ামতের জন্য কৃতজ্ঞ থাকা।
ঘ. তাঁর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকা।
ঙ. তাঁর পরীক্ষায় ধৈর্য্যশীল হওয়া।
চ. তাঁর পবিত্রতার তসবীহ করা। এবং
ছ. তাঁকে পাওয়ার আকাঙ্খা করা।
২) নিজের সাথে
আচরণের সাতটি নীতি হচ্ছে;
ক. ভয়।
খ. সংগ্রাম।
গ. ক্ষতি সহ্য করা।
ঘ. আধ্যাতিক শৃঙ্খলা।
ঙ. সত্যবাদিতা ও ইখলাস (আন্তরিকতা) সন্ধান করা।
চ. নফস যা ভালোবাসে তা থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখা।
ছ. নফসকে দারিদ্রের (ফাকর) সাথে বেঁধে ফেলা।
৩) সৃষ্টির সাথে
আচরণের সাতটি নীতি হলো;
ক. ক্ষমাশীলতা।
খ. বিনয়।
গ. উদারতা।
ঘ. দয়ামায়া।
ঙ. সৎ উপদেশ।
চ. ন্যায় বিচার।
ছ. সাম্যতা।
৪) এই পৃথিবীর সাথে আচরণের সাতটি নীতি হলো;
ক. হাতে যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা।
খ. যা নেই তার চাইতে যা আছে তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া।
গ. যা ধরা দেয় না তা পাওয়ার প্রচেষ্টা পরিত্যাগ করা।
ঘ. অতিরিক্ত প্রাচুর্য্ ঘৃণা করা।
ঙ. অল্পতে তুষ্টি বেছে নেওয়া।
চ. এ পৃথিবীর খারাপকে জানা ও তা পাওয়ার আকাঙ্খা পরিত্যাগ
করা।
ছ. পৃথিবীর আধিপত্যকে অগ্রাহ্য করা।
যখন এই সবগুলো গুণাবলী কোন ব্যক্তির মাঝে পাওয়া যায়
তাহলে সে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার উচ্চস্থানীয় ও তাঁর ঘনিষ্ট দাস এবং বন্ধুদের
(আউলিয়া) একজন।
দাসত্বের বিষয়ে
আরো কিছু কথা
দাসত্ব হলো সারবস্তু, যার অন্তর্নিহিত প্রকৃতি হচ্ছে প্রভূত্ব (রুবুবিয়াহ)।দাসত্বে যা অনুপস্থিত তা প্রভূত্বে পাওয়া যায় এবং যা প্রভূত্ব থেকে পর্দার আড়ালে থাকে তা দাসত্বে পাওয়া যায়। যেমন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন,“আমরা শিঘ্রই তাদেরকে দেখাবো আমাদের নিদর্শণ দিগন্তে এবং তাদের সত্বার ভিতরে। ঐ ক্ষণ পর্য্ন্ত তাদের কাছে তা স্পষ্ট হয়ে যাবে যে তা সত্য। তোমার রবের বিষয়ে এটি কি যথেষ্ট নয় যে তিনি সব কিছুর উপরে সাক্ষী?”(সূরা : হা-মীম আস-সাজদাহ : ৫৩)
এর অর্থ তিনি অস্তিত্ববান তোমার অনুপস্থিতিতে এবং তোমার
উপস্থিতিতেও।দাসত্ব অর্থ্ নিজেকে সবকিছু থেকে মুক্ত করে ফেলা এবং তা অর্জনের পথ হচ্ছে
নিজের সত্তা যা পেতে চায় তা তাকে দিতে অস্বিকার করা এবং তা যা অপছন্দ করে তা তাকে বহন
করতে বাধ্য করা।এর চাবি হচ্ছে বিশ্রাম পরিত্যাগ করা। একাকীত্বকে ভালোবাসা এবং“আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে প্রয়োজন” এ স্বীকৃতির পথকে অনুসরণ করা।
পবিত্র
নবি (তাঁর ও তাঁর পরিবারের উপর শান্তি বর্ষিত হোক) বলেছেন,“ আল্লাহ সুবহানাহু
ওয়া তায়ালার ইবাদত করো যেন তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছো। এমনকি যদি তুমি তাঁকে দেখতে না
পাও, তিনি তোমাকে দেখছেন।”
আব্দ বা দাস শব্দটিতে তিনটি অক্ষর আছে: আইন, বা, দাল।
“আইন” হচ্ছে (ইল্ম) বা আল্লাহ সম্পর্কে একজনের জ্ঞান এবং “বা” হচ্ছে (বাইন) যার অর্থ হলো আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন কিছু থেকে
কোন ব্যক্তির দূরত্ব এবং “দাল” হচ্ছে (দুনু) বা আল্লাহর সাথে ব্যক্তির
নৈকট্য, কোন গুণাবলী ও পর্দার বাঁধা ছাড়া।
আচরণের
মূলনীতি চারটি, যেভাবে আমরা এ অধ্যায়ের শুরুতে বলেছি।
দৃষ্টি নামিয়ে রাখার বিষয়ে
ব্যক্তি তার দৃষ্টিকে নামিয়ে রাখবে- এর চেয়ে লাভজনক আর কিছু নেই, কারণ দৃষ্টি সে বিষয়ের উপর থেকে নিজেকে নামিয়ে রাখে না যা আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা হারাম করেছেন, যদি না ইতোমধ্যেই (আল্লাহর)মর্য্দা ও গৌরব ‘প্রত্যক্ষ করা’ তার অন্তরে উপস্থিত হয়েছে।
বিস্বাসীদের আমীরকে (হযরত আলী (রাঃ) জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: কী দৃষ্টিকে নামিয়ে রাখতে সাহায্য করে? তিনি বলেছিলেন,“ তাঁর শক্তির কাছে আত্মসমর্পৃণ করা যিনি তোমার গোপণ বিষয় জানেন। চোখ হচ্ছে অন্তরের গুপ্তচর এবং বুদ্ধির দূত। তাই তোমার দৃষ্টিকে তা থেকে নামিয়ে রাখ যা তোমার বিস্বাসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণৃ নয়, যা তোমার অন্তর অপছন্দ করে এবং যা তোমার বুদ্ধির কাছে ঘৃণ্য মনে হয়।”
পবিত্র নবি (তাঁর ও তাঁর পরিবারের উপর শান্তি বর্ষিত
হোক) বলেছেন,“ তোমরা চোখকে নামিয়ে রাখো-তোমরা বিষ্ময়কর জিনিস দেখবে।”
আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বলেছেন,“বিশ্বাসীদের বলো
যেন তারা তাদের দৃষ্টিকে নামিয়ে রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থান হেফাযত করে।” (সূরা নূর :
৩০)
ঈসা (আঃ)তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন,“নিষিদ্ধ জিনিসের দিকে তাকানো থেকে সতর্ক্
হও, কারণ তা আকাঙ্খার বীজ এবং তা পথভ্রষ্ট আচারণের দিকে নিয়ে যায়।”
ইয়াহইয়া (আঃ) বলেছেন,“ আমি অপ্রয়োজনীয় দৃষ্টিপাতের চাইতে মৃত্যুকে
শ্রেয় মনে করি।”
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ এক ব্যক্তিকে বলেছিলেন যে এক
অসুস্থ্ মহিলাকে দেখতে গিয়েছিলো“অসুস্থ ব্যক্তিকে
দেখতে যা্ওয়ার চাইতে তোমার চোখ দুটো হারানো উচিত ছিল।”
যখনই চোখ কোন নিষিদ্ধ জিনিসের দিকে তাকায়, আকাঙ্খার
একটি গীট সে ব্যক্তির অন্তরে বেঁধে যায় এবং সেই গীট খুলবে শুধু দুই শর্তেঃ হয় প্রকৃত
তওবায় সে দুঃখে কাঁদবে অথবা যেদিকে সে তাকিয়েছিলো এবং যার আকাঙ্খা করেছিল তার দখল নেবে।
আর যদি কোন ব্যক্তি তার দখল নেয় অন্যায়ভাবে, তওবা ছাড়া, তাহলে তা তাকে আগুণে (জাহান্নামে)
নিয়ে যাবে।
আর যে ব্যক্তি দুঃখ ও অনুতাপের সাথে তওবা করে, তার
বাসস্থান হচ্ছে জান্নাতে এবং তার গন্তব্য হচ্ছে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার অনুগ্রহ।
হাঁটার বিষয়ে
যদি তুমি বুদ্ধিমান হয়ে থাকো তাহলে যে কোন স্থান থেকে রওনা দেওয়ার আগে তোমার উচিত দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হওয়া এবং সৎ নিয়ত রাখা, কারণ সত্তার প্রকৃতি হচ্ছে সীমা লঙ্ঘন করা এবং নিষিদ্ধ জিনিসে অবৈধ হাত প্রসারিত করা। যখন তুমি হাঁটো তখন তোমার উচিত গভীরভাবে ভাবা এবং আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার বিষ্ময়কর কাজগুলো লক্ষ্য করা-যেখানেই তুমি যাও। টিটকারি করো না অথবা দম্ভভরে হেঁটো না যখন হাঁটো। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বলেছেন,“ গর্ব ভরে যমীনে হাঁটাচলা করো না।”( সূরা লুকমান : ১৮)
তোমার চোখ নামিয়ে রাখো তা থেকে যা তোমার বিশ্বাসের
প্রতি সঙ্গতিপূর্ণৃ নয় এবং আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালাকে বার বার স্মরণ করো। একটি হাদিস
রয়েছে যে, যে সব স্থানে এবং যার সাথে আল্লাহর স্মরণ-এর সম্পর্ক্ আছে সেগুলো বিচার দিনে
আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার সামনে সাক্ষ্য দিবে এবং সেসব মানুষের জন্য ক্ষমা ভিক্ষা চাইবে
যেন আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করতে দেন।
পথ চলার সময় লোকজনের সাথে অতিরিক্ত কথা বলো না, কারণ
তা বাজে আচরণ।বেশির ভাগ রাস্তা হচ্ছে ফাঁদ ও শয়তানের বাজার, তাই তার ধোঁকা থেকে নিরাপদ ভেব না।তোমার আসা ও যাওয়াকে আল্লাহ
সুবহানাহু তায়ালার আনুগত্য বানাও-তাঁর সন্তুষ্টির জন্য সংগ্রাম করে, কারণ তোমার সব
চলাফেরা বইতে লিপিবদ্ধ হবে। যেভাবে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বলেছেন,“ সেদিন তাদের
জিহবা এবং তাদের হাতগুলো ও পাগুলো সাক্ষী দেবে তাদের বিরুদ্ধে-তারা যা করেছিলো সে সম্পর্কে।” (সূরা নূর:২৪)
আল্লাহ সুবাহনাহু তায়ালা আরো বলেছেন,“ আমরা প্রত্যেক ব্যক্তির কর্মৃকে তার ঘাড়ে ঝুলিয়ে দিই।” (সূরা বনী ইসরাইল:১৩)
0 Comments