পরিচ্ছদ : একুশ (ভাইয়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শণ, সংগ্রাম ও শৃঙ্খলা, মৃত্যু নিয়ে ভাবনা, ভালো ধারণা)


ভাইদের প্রতি সম্মান প্রদর্শণ

বিশ্বাসে যারা ভাই তারা করমর্দন করে তাদের প্রতি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ভালোবাসার কারণে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যখনই ভাইরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার পথে করমর্দন করে তাদের ভুল কাজগুলো দূর হয়ে যায় এবং এতে তারা সেদিনের মতো হয়ে যায় যেদিন তাদের মা তাদেরকে জন্ম দিয়েছিলেন। যখন দুই ভাইয়ের পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা বৃদ্ধি পায় তখন তাদের জন্যও এর বৃদ্ধি ঘটে। দুজনার মধ্যে যার আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ধর্ম সম্পর্কে বেশি জ্ঞান আছে তার জন্য বাধ্যতামূলক যে সে তার বন্ধুকে উৎসাহিত করবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা যে বাধ্যতামূলক কাজগুলোকে প্রয়োজনীয় করেছেন তা সম্পাদন করতে এবং  তাকে পথ দেখাবে সোজা পথে যাওয়ার জন্য, সন্তুষ্টি ও মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে, তাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার রহমতের সুসংবাদ দিবে এবং তার শাস্তির ভয় দখাবে। অন্য ভাইটি তার পথ দেখানোর রহমতকে চাইবে এবং তা সে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখবে যার দিকে সে ডাকছে, তার সতর্কবাণী মনে রাখবে এবং তার মাধ্যমে পথ দেখাবে এবং এ পুরো সময়ে সে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে নিরাপত্তা চাইবে এবং তার সাহায্য ও সফলতা চাইবে।

ঈসা (আঃ) কে একবার জিজ্ঞাসা করা হলো:আজ সকালে আপনি কেমন আছেন? তিনি বললেন, আমি যা আশা করি তার কল্যাণ আমার আয়ত্বে নেই, না আমি প্রতিরোধ করতে পারি তাকে যার বিরুদ্ধে আমি সতর্ক পাহারায় আছি।একই সময়ে আমাকে আদেশ করা হয়েছে অনুগত হয়ে চলতে এবং নিষেধ করা হয়েছে বিদ্রোহ করতে।আমি মনে করি না আমার চাইতে বেশি ফক্বির কোন ফক্বির আছে।উয়ায়েস আল-ক্বারানিকে একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, সে বলেছিলো: “ঐ লোক সকালে কেমন থাকবে যখন সে জানে না সে সন্ধ্যায় বেঁচে থাকবে কি না এবং সন্ধ্যায় সে জানে না সকাল পর্যন্ত সে বেঁচে থাকবে কি না?”

আবু যার বলেছিলোঃ সকালে আমি ধন্যবাদ দিই আমার রবকে এবং ধন্যবাদ দিই আমাকে।” রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে সকালে ঘুম থেকে ওঠে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ছাড়া অন্য কিছুর আশা করে সে ক্ষতিগ্রস্ত ও সীমালংঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে


সংগ্রাম ও শৃঙ্খলা

প্রশান্তি সেই বান্দাহর অধিকারে যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার জন্য সংগ্রাম করে তার নিজের প্রকৃতি ও কামনা-বাসনার বিরুদ্ধে : যে তার কামনা-বাসনাকে পরাজিত করে সে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সন্তুষ্টি জিতে নেয় এবং আল্লাহর দাসত্বে যার বুদ্ধি তার নিজের সত্তাকে চেষ্টা, সংগ্রাম, আত্মসমর্পণ এবং বিনয়ের মাধ্যমে পিছনে ফেলে দেয় সে এক বিরাট বিজয় অর্জন কেরেছে।বান্দাহ ও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার মাঝে নফস ও কামনা-বাসনার চেয়ে বেশি অন্ধকার অথবা এর চেয়ে বেশি নির্জন কোন পর্দা নেই।এগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ও তাদেরকে ধ্বংস করার জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার পূর্ণ প্রয়োজন অনুভব করা, ভয়, ক্ষুধা, দিনের বেলা পিপাসা এবং রাতের বেলায় জেগে থাকার চাইতে ভালো আর কোন অস্ত্র নেই।

          যখন এ বৈশিষ্ট্যের কোন মানুষ মারা যায় সে মৃত্যুবরণ করে শহীদের মর্যাদা নিয়ে। যদি সে সোজা পথ অনুযায়ী চলে তাহলে তার শেষ তাকে নিয়ে যাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সর্বোচ্চ সন্তুষ্টির কাছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন : আর যারা আমাদের জন্য কঠিন সংগ্রাম করে, আমরা অতি অবশ্যই তাদেরকে পথ দেখাবো আমাদের পথে এবং অতি অবশ্যই আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সাথে আছেন। (সুরা আনকাবুত : ৬৯)

যখন তুমি দেখ অন্য কেউ তোমার চেয়ে বেশি চেষ্টা করছে তখন নিজেকে তিরস্কার করো ও বকা দাও নিজেকে উৎসাহিত করার জন্য - আরো বেশি চেষ্টা করতে। আদেশ ও নিষেধের লাগাম পরাও নিজের সত্তাকে এবং এমনভাবে কাজ চালিয়ে যাও যেন তুমি একজন প্রশিক্ষক যে তার ঘোড়াকে একটি পদক্ষেপও নিতে দেয় না যদি তা পুরোপুরি সঠিক না হয়।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এত দীর্ঘ সময় ধরে নামায পড়তেন যে তাঁর পা দুটো ফুলে যেতো।তিনি বলতেন, আমি কিভাবে একজন কৃতজ্ঞ বান্দাহ না হই?” রাসুলুল্লাহ(সাঃ) চেয়েছিলেন যেন তাঁর সম্প্রদায় তা বিবেচনা করে।যাতে তারা সংগ্রাম, পরিশ্রম ও ‍শৃঙ্খলাকে কোন অবস্থাতেই উপেক্ষা না করে।যদি তোমার আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ইবাদতের মিষ্টি স্বাদ পাওয়ার অভিজ্ঞতা হতো, বরকত দেখতে পেতে এবং এর আলোতে আলোকিত হতে তাহলে তুমি এর অনুপস্থিতিতে এক ঘন্টার জন্যও ধৈর্য ধরতে না, এমনকি তোমাকে কেটে টুকরো করে ফেললেও না। কেউ এ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় না যদি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছ থেকে এরকম নিরাপত্তা ও সফলতা থেকে কাউকে প্রত্যাখ্যান করা না হয় যেভাবে তা অর্জন করেছিলো তার পূর্বপুরুষেরা।

রাবি ইবনে কুসাইমকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল কেন সে রাতে ঘমাতো না। সে উত্তর দিয়েছিলঃ    কারণ আমি ভয় পাই যে রাতটি হয়তো আমি ঘুমিয়েই কাটিয়ে দেব।


মৃত্যু নিয়ে ভাবনা

মৃত্যুকে নিয়ে ভাবলে তা আশা আকাঙ্খাকে হত্যা করে, কথা গ্রাহ্য না করার শিকড়কে কেটে ফেলে এবং অন্তরকে শক্তিশালী করে আখেরাতের জীবন সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রতিশ্রুতিতে।

এটি প্রকৃতিকে বিশুদ্ধ করে এবং কামনা-বাসনার চিহ্নগুলো ভেঙে ফেলে, লোভের আগুনকে নিভিয়ে ফেলে এবং পৃথিবীকে ঘৃণ্য বানিয়ে দেয়। এটিই হলো রাসুলুল্লাহর (সাঃ) কথার অর্থঃ এক ঘন্টার জন্য ভাবা এক বছরের ইবাদাতের চেয়ে উত্তম।” ঐ এক ঘন্টার ভাবনা হলো সেই মুহূর্ত যখন তুমি এ পৃথিবীর সাথে তোমাকে বেঁধে রাখা রশিগুলো খুলে ফেলবে এবং সেগুলোকে আখেরাতের সাথে বেঁধে নিবে। যখন মুত্যুকে এভাবে স্মরণ করা হয়, আকাশ থেকে রহমত বর্ষণ কখনো বন্ধ হয় না।যদি কোন ব্যক্তি মৃত্যুর বিষয় এবং এ থেকে তার নিজের পালানোর উপায়ের অভাবের বিষয়, তার বিরাট অক্ষমতার বিষয়, কবরে কত দীর্ঘ সময় ধরে সে থাকবে এবং কেয়ামতের সময় তার কিংকর্তব্যবিমুঢ়তার বিষয় নিয়ে না ভাবে তাহলে তার ভেতরে ভালো কিছু নেই।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আনন্দ ফুর্তির ধ্বংসকারীকে স্মরণ রেখো।যখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো সেটি কি, তিনি বললেনঃ মৃত্যু। যখনই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কোন বান্দাহ তা করে যখন সে ধনী তখন এ পৃথিবী তার জন্য সংকীর্ণ হয়ে যায়।যখন সে একে স্মরণ করে কষ্টের সময় তখন তা তার জন্য প্রশস্ত হয়ে যায়।” মৃত্যু হলো পরবর্তী পৃথিবীর প্রথম স্টেশন এবং এ পৃথিবীর শেষ স্টেশন।রহমত প্রাপ্ত সে যে নিজের প্রতি উদারতা দেখায় এবং উপকার লাভ করে শুরুতে এবং রহমত প্রাপ্ত সে যে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে শেষে।

আদম সন্তানের সবচেয়ে নিকট সাথী হলো মৃত্যু।যদিও সে স্বপ্ন দেখে যে তা সবচেয়ে দূরে।মানুষ নিজেকে কতই না আঘাত করে।এর চেয়ে দুর্বল আর কোন প্রাণী আছে? মৃত্যুতেই নিহিত আছে মুখলেছ (আন্তরিক) লোকদের উদ্ধার এবং অন্যায়কারীদের ধ্বংস।

এজন্যই কিছু মানুষ মৃত্যুকে চায় যখন অন্যরা একে ঘৃণা করে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যদি কোন ব্যক্তি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সাথে সাক্ষাত করে তাহলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তার সাথে সাক্ষাত করতে ভালোবাসেন এবং যদি কোন ব্যক্তি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সাথে সাক্ষাত করতে ঘৃণা করে তাহলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তার সাথে সাক্ষাত করাকে ঘৃণা করেন।


ভালো ধারণা

ভালো ধারণার শিকড় হলো ব্যক্তির বিশ্বাস ও তার অন্তরের সুস্থতা; ভালো ধারণার চিহ্ন হলো যখনই সে তাকায় সে পবিত্রতা ও ধার্মিকতার দৃষ্টি দিয়ে দেখে যেখানেই সে যায়, এবং মধ্যপন্থা, বিশ্বস্ততা, নিরাপত্তা ও সত্যবাদিতা তার অন্তরে স্থাপন করা হয়। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তোমার ভাইদের সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখো।এর মাধ্যমে তুমি অন্তরের পবিত্রতা ও প্রকৃতিতে দৃঢ়তা লাভ করবে ‍উবাই ইবনে কাব বলেছিলো: যখন তুমি তোমার ভাইদের ভেতর কোন গুণকে পছন্দ না করো তাহলে এর সত্তরটি ব্যাখ্যা দাও এবং দেখ যে এর কোন একটির সাথে তোমার অন্তর শান্তি পায় কি না। যদি তা না হয় তাহলে নিজেকে দোষারোপ কর যদি তাকে মার্জনা করতে না পারো।যদি তোমার কোন গুণ থাকে যার সত্তরটি ব্যাখ্যা আছে তাহলে তোমার উচিত তাকে অপছন্দ করার চাইতে তোমার নিজেকে আরও বেশি অপছন্দ করা।আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা দাউদকে (আঃ) বলেছিলেনঃ আমার বান্দাহদের স্মরণ করিয়ে দাও আমার রহমত ও নিয়ামতগুলো সম্পর্কে। তারা শুধু বিশেষ ভালো জিনিসগুলোই আমার কাছ থেকে দেখতে পেয়েছে, তাই তাদের উচিত শুধু তাই আশা করা যে, যা বাকি রয়ে গেছে তা ইতোমধ্যেই তারা যা পেয়েছে তারই মতো হবে।ভালো ধারণা ভালো ইবাদত এনে দেয়। যে ব্যক্তি ধোঁকায় পড়েছে সে বিদ্রোহের ভেতর পড়ে থাকে যদিও সে ক্ষমার আশা করে।আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সৃষ্টির প্রতি ভালো ধারণা রাখা তাদের জন্য বিশেষভাবে রাখা হয়েছে যারা তাঁকে মানে, তাঁর পুরস্কার আশা করে এবং তাঁর শাস্তিকে ভয় পায়।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর রবের কাছে থেকে বর্ণনা করেছেন,আমি আছি আমার বান্দাহদের ভালো ধারণার সাথে, হে মুহাম্মদ, যে তার রবের সম্পর্কে ভালো ধারণার নেয়ামতগুলোর বাস্তবতা মেনে চলতে ব্যর্থ হয় সে তার নিজের বিরুদ্ধে প্রমাণ জোরদার করেছে এবং সে তাদের একজন যারা তাদের কামনা-বাসনার শিকলে প্রতারিত হয়েছে।


Reactions

Post a Comment

0 Comments