নিজেকে আল্লাহ
সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে সমর্পণ
যে তার নিজের
বিষয়কে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে সমার্পণ করে সে চিরস্থায়ী আরাম ও সার্বক্ষণিক
চিন্তামুক্ত জীবন যাপন করে।একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ছাড়া সে কোন কিছু চিন্তা
করার উর্ধ্বে। আমিরুল মুমিনীন বলেছেন, “ আমি সন্তুষ্ট
ছিলাম যা আল্লাহ আমার জন্য নির্ধারণ করেছেন এবং আমি আমার বিষয়কে আমার সৃষ্টিকর্তার
কাছে সমার্পণ করেছি।”
চলে যাওয়া বিষয়গুলোতে
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা যে রকম ভালো ছিলেন (মানুষের প্রতি), সে রকমই তিনি থেকে
যাওয়া বিষয়গুলোতেও (মানুষের প্রতি)ভালো থাকবেন।
যেমন আল্লাহ সুবহানাহু
ওয়া তায়ালা বলেছেনঃ একজন বিশ্বাসীর ভাষায় যে ছিল ফেরাউনের লোকজনের ভেতরে :
“
আমি
আমার বিষয়কে আল্লাহর কাছে সমার্পণ করেছি, নিশ্চয়ই আল্লাহ তার বান্দাহদের দেখেন। তাই
আল্লাহ তাকে রক্ষা করলেন তাদের পরিকল্পনার অনিষ্ট থেকে এবং সবচেয়ে খারাপ শাস্তি ফেরাউনের
দলকে স্পর্শ করলো।” (সুরা মু’মিন: ৪৪-৪৫)
---(তাফউইদ বা
সমর্পণ করা) শব্দটিতে পাঁচটি অক্ষর আছে, প্রত্যেকটি অক্ষরে একটি আদেশ রয়েছে। যে এ আদেশগুলো
গ্রাহ্য করে সে এগুলো মেনে চলে- যেমন ---- (তারক বা পরিত্যাগ করা) এর ---------- যার
অর্থ হলো এ পৃথিবীতে পরিকল্পনগুলো পরিত্যাগ করা; --------(ফানা বা বিলীন হওয়া) - এর
‘---------’
যার
অর্থ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ছাড়া সবকিছুর আশা বিলীন হওয়া;
------(ওয়াফা বা চুক্তি)-এর
‘ ’ যা হলো চুক্তি বাস্তাবায়ন করা এবং
প্রতিশ্রুতি পূরণ করা; ‘
’(ইয়া’স বা হতাশ হওয়া)- এর ‘
----’ যা
হলো নিজেকে নিয়ে হতাশ হওয়া এবং তোমার রবের বিষয়ে ------ইয়াক্বীন এবং
---------(দামির বা বিবেক)- এর ‘
----’ যা
হলো একমাত্র আল্লাহর জন্য বিবেক এবং ‘---------’(দারুরাহ বা প্রয়োজন)-তাঁকে (আল্লাহকে)প্রয়োজন।সে তার সবকিছু
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে সমার্পণ করে সে সকালে ঘুম থেকে উঠে সব খারাপ মুক্ত
হয়ে এবং রাতে সে বিশ্বাসের পূর্ণ নিরাপত্তা নিয়ে ঘুমায়।
ইয়াক্বীন (যে
বিশ্বাস নিশ্চয়তায় পৌছেছে)
ইয়াক্বীন বান্দাহকে
নিয়ে যাবে প্রত্যেক ঐশী অবস্থায় (হাল) এবং বিষ্ময়কর মাক্বামে; ঈসার (আঃ) ইয়াক্বীন-এর
বিশালতা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) জানালেন যে তিনি পানির উপর হাঁটতেন।তিনি বলেছেন,“
যদি
তাঁর আরও ইয়াক্বীন থাকতো তাহলে সে বাতাসে হাঁটতো।” এর মাধ্যমে তিনি
ইঙ্গিত করেছেন যে আল্লাহ কাছে রাসূলদের (আঃ)বিরাট মর্যাদা থাকা সত্বেও তাদের ইয়াক্বীন
অনুযায়ী তাদের মর্যাদার শ্রেণি বিভাগ ছিল। ইয়াক্বীন সব সময় বৃদ্ধি পেতে থাকে, এবং চিরকাল
ধরে তা বৃদ্ধি পেতে থাকে।বিশ্বাসীদের মাঝেও পার্থক্য আছে তাদের ইয়াক্বীনের শক্তি ও
দুর্বলাত অনুযায়ী।যার ইয়াক্বীন শক্তিশালী তাকে চেনা যায় বাস্তবতার মাধ্যমে যে - সে
দেখে কোন শক্তি ও কোন ক্ষমতা নেই তা ছাড়া যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাকে দিয়েছেন
এবঙ তার প্রকাশ্যে ও গোপনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার আদেশ মেনে চলা ও ইবাদত করা
দেখে।থাকা ও না থাকা, বৃদ্ধি পাওয়া ও কমে যাওয়া, প্রশংসা ও দোষারোপ, শক্তি ও মর্যাদাহীনতাকে
সে একই স্তরের বলে মনে করে। যে ব্যক্তি তার ইয়াক্বীনকে দুর্বল করে সে নিজের নফসকে লাগামহীন
রাজত্ব করতে দেয়। সে সাধারণ জনগণের রীতিনীতি ও কথাকে অনুসরণ করে সেগুলোর কোন প্রমাণ
না দিয়ে, এবং এ পৃথিবীর বিষয়গুলোর জন্য সংগ্রাম করে এর সম্পদ জমা করে এবং তা আঁকড়ে
ধরে তার জিহ্বার মাধ্যমে তা স্বীকার করে ও সত্যায়ন করে।
আল্লাহ সুবহানাহু
ওয়া তায়ালা ছাড়া বঞ্চিত রাখারও কেউ নেই, দেয়ারও কেউ নেই এবং বান্দাহ শুধু তাই নিতে
পারে যা তাকে দেওয়া হয় এবং যা তার জন্য নির্ধারিত হয়। চেষ্টা রিজক বৃদ্ধি করে না।কিন্তু
সে তা অস্বীকার করে তার কাজ ও অন্তর দিয়ে। আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তায়ালার কথায় : “
তারা
তাদের মুখ দিয়ে বলে যা তাদের অন্তরে নেই এবং আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন তা কী লুকায়।”
(সূরা আল-ইমরান : ১৬৭)
আল্লাহ সুবহানাহু
ওয়া তায়ালা তাঁর বান্দাহদের প্রতি দয়ালু ছিলেন যখন তিনি তাদেরকে অর্থ উপার্জনের অনুমতি
দিয়েছিলেন যেভাবে তারা চায়, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার দেয়া
সীমানা অতিক্রম না করে অথবা তাদের যে কোন কাজে তাঁর প্রতি দায়িত্ব ও তাঁর রাসূলের
(সাঃ)সুন্নাত পরিত্যাগ না করে বা আস্থার চেতনা পরিত্যাগ না করে বা লোভের ময়দানে বন্দি
না হয়ে পড়ে।কিন্তু যখন তারা তা ভুলে যায় ও নিজেদেরকে সেসবের সাথে যুক্ত করে যা তাদের
বলা হয়েছে তার বিপরীত, তখন তাদেরকে ধ্বংসপ্রাপ্তদের সাথে গোনা হবে; শেষ পর্যন্ত মিথ্যা
দাবি ছাড়া যাদের কিছুই থাকে না।যারা উপার্জন করে তাদের সবাই যথেষ্ট বিশ্বস্ত নয়ঃ সে
শুধু নিষিদ্ধ ও সন্দেহযুক্ত জিনিস আনে উপার্জন হিসাবে।তাকে চেনা যাবে তার উপরে তার
উপার্জনের প্রভাব, তার তৃপ্তিহীন ক্ষুধা এবং কোন বিরতি ছাড়া পৃথিবীর জন্য সে কীভাবে
খরচ করে তা দেখে।
ভয় ও আশা
ভয় হচ্ছে অন্তরের
হেফাযতকারী এবং আশা হচ্ছে সত্বার শাফায়াতকারী। যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে চেনে
সে তাঁকে ভয় করে এবং তাঁর প্রতি আশা স্থাপন করে।এগুলো হচ্ছে বিশ্বাসের দু’টো পাখা যা দিয়ে
প্রকৃত বান্দাহ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সন্তুষ্টির দিকে উড়ে যায়।এগুলো বৃদ্ধির
দু’টো চোখ যাদের মাধ্যমে সে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রতিশ্রুতি ও হুমকি দেখতে
পায়;তার ভয় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ন্যায় বিচার সম্পর্কে ভাবে সেই হুমকিকে খুব
সতর্কতার সাথে বিবেচনা করার মাধ্যমে। আশা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার উপচে পড়া নেয়ামত
ডেকে আনে এবং অন্তরকে জীবন দেয়, একই সময়ে ভয় নফসকে হত্যা করে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,“ বিশ্বাসীদের কাছে
দু’ধরনের ভয় : যা চলে গেছে তা নিয়ে এবং যা আসবে তার জন্য ভয়।”
নফস-এর মৃত্যুতে
নিহিত আছে অন্তরের জন্য জীবন- যা আমলে দৃঢ়তা আনে।যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ইবাদত
করে ভয় ও আশার ভারসাম্য নিয়ে সে পথভ্রষ্ট হবে না এবং সে যা আশা করে তা লাভ করবে।একজন
বান্দাহ ভীত ছাড়া আর কী হবে যখন সে জানে না তার কোন কাজের সময় তার খাতা বন্ধ হবে, যখন
তার কাছে কৃত এমন কোন আমল নেই যা তাকে সাহায্য করতে পারে, কোন শক্তি নেই কিছু করার
এবং কোন জায়গা নেই পালাবার? কিভাবে সে আশা করতে ব্যর্থ হবে যখন সে জানে তার অক্ষমতা
সত্বেও সে ডুবে আছে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার রহমত ও নেয়ামতগুলোর ভেতর যা গোনা
যায় না বা যেগুলোকে সংখ্যাবদ্ধ করা যায় না। প্রেমিক তার রবের ইবাদত করে আশা নিয়ে, নিজের
অবস্থা নিয়ে ভাবে জাগ্রত ব্যক্তির দৃষ্টি দিয়ে এবং যাহেদ (যে বিরত থাকে) ইবাদত করে
ভয় নিয়ে।
হারাম ইবনে হাইয়্যানকে
উয়ায়েস আল-ক্বারানী বলেছিলেন,“ মানুষ আশার কারণে কাজ করে, কিন্তু
তুমি কাজ করো ভয়ে।” হারাম বললোঃ দু’ধরনের ভয় আছেঃ
স্থায়ী এবং পরিবর্তনশীল। স্থায়ী ভয় আশা আনে, আর পরিবর্তনশীল ভয় আনে স্থায়ী ভয়।একইভাবে
দু’ধরনের আশা আছে:
গোপন ও প্রকাশ্য। গোপন আশা স্থায়ী ভয় আনে যা প্রেমের যোগসূত্রকে শক্তিশালী করে; আর
প্রকাশ্য আশা তার জীবনকালে সে যা করেছে সে বিষয়ে তার অক্ষমতা ও ত্রুটিগুলো সম্পর্কে
প্রত্যাশাগুলো পূর্ণ করে।
তৃপ্তি
তৃপ্তি হলো যখন
কোন ব্যক্তি সে যা ভালোবাসে ও সে যা ঘৃণা করে তা নিয়ে সন্তুষ্ট আছে; এটি মারেফাতের
নূরের একটি রশ্নি।যে তৃপ্ত সে তার সমস্ত পছন্দে বিলীন হয়ে গেছে; সে হচ্ছে সেই ব্যক্তি
যার সাথে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সন্তুষ্ট আছেন।তৃপ্তি একটি নাম যা দাসত্বের অর্থ
বহন করে এবং একে অন্তরের আনন্দ হিসেবে বর্ণনা করা যেতে পারে।
আমি আমার পিতা মুহাম্মদ বাক্বির-কে বলতে শুনেছি, “ যা উপস্থিত আছে তার সাথে অন্তরকে যুক্ত করা হলো শিরক এবং যা নেই তার সাথে যুক্ত করা কুফর (অবিশ্বাস): কথা গ্রাহ্য না করার স্বভাবের পাখা হলো দু’টি। আমি অবাক হই তাকে নিয়ে যে দাবি করে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার দাস হিসাবে এরপর তাঁর রায়গুলো নিয়ে তর্ক করে। তৃপ্ত আধ্যাত্মিক লোকেরা (আরিফীন) এ রকম হওয়া থেকে অনেক দূরে।”
0 Comments