প্রজ্ঞা
প্রজ্ঞা হচ্ছে
মারেফাতের নূর, ভয়পূর্ণ সচেতনতার মাত্রা এবং সত্যবাদীতার ফল। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া
তায়ালা তাঁর কোন বান্দাহকে তার অন্তরের জন্য প্রজ্ঞার চাইতে মহান, এর চাইতে পছন্দনীয়,
উদার, উচ্চস্থানীয় অথবা সুন্দর নিয়ামত আর দেননি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কথায়,
“ তিনি প্রজ্ঞা দান করেন যাকে তাঁর ইচ্ছা
এবং যাকে প্রজ্ঞা দেওয়া হয়, তাহলে অবশ্যই তাকে দেওয়া হয়েছে এক বিরাট ভালো জিনিস এবং
বুঝদার মানুষ ছাড়া কেউ বোঝে না।” (সূরা বাকারা:২৬৯)
এর অর্থ- শুধু
যাকে আমি বাছাই করেছি আমার জন্য এবং যাকে আমি নির্ধারণ করেছি এর জন্য, কেবল সেই জানে
কী প্রজ্ঞা আমি সংরক্ষণ ও প্রস্তুত করেছি।
প্রজ্ঞা হচ্ছে
উদ্ধার, বিষয়ের শুরুতে স্থিরতা এবং শেষে দৃঢ় ভূমিকা। এটি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার
বান্দাহর ভেতরে তাঁর প্রতি উচ্চাশা সৃষ্টি করে।রাসুলুল্লাহ (সাঃ) হযরত আলীকে বলেছেন,
“ যদি তোমার হাতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া
তায়ালা তাঁর কোন বান্দাহকে পথ দেখান তা তোমার জন্য সে সব জিনিসের চাইতে উত্তম যাদের
উপরে সূর্য আলো দেয় পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত।”
দাবী করা
বাস্তবে দাবী
করা শুধু রাসুলুল্লাহ (সাঃ), ইমামদের (আঃ) এবং সত্যবাদীদের অধিকার এবং যে ব্যক্তি অযৌক্তিকভাবে
দাবী করে সে অভিশপ্ত ইবলিস - এর মত। সে ধার্মিকতার দাবী করে অথচ বাস্তবে সে আল্লাহর
সাথে (অন্তরে) তর্ক করে এবং তাঁর আদেশের বিরোধীতা করে। যে এ ধরনের দাবী করে সে তার
মিথ্যাকে প্রকাশ করে এবং মিথ্যাবাদীকে বিশ্বাস করা যায় না, যে কোন কিছু দাবী করে যা
তার জন্য বৈধ নয় সে তার নিজের জন্য দুঃখ-দুর্দশার দরজা খুললো।যে কেউ কোন কিছুর দাবী
করে তাকে সন্দেহাতীতভাবে জিজ্ঞাসা করা হবে স্পষ্ট প্রমাণের জন্য, যার মাধ্যমে দেখানো
হবে যে, সে দেউলিয়া ও অপমানিত।সত্যবাদীকে জিজ্ঞাসা করা হয় না তার কাজের কারণ সম্পর্কে।যেমন
হযরত আলী বলেছেন, “ কোন ব্যক্তি
একজন সত্যবাদী লোকের প্রতি শ্রদ্ধার দৃষ্টি ছাড়া তাকায় না।”
কথা গ্রাহ্য করা
রাসুলুল্লাহ
(সাঃ) বলেছেন,“ যে এ পৃথিবীতে
তার শিক্ষা গ্রহন করে সে এতে বাস করে ঘুমন্ত ব্যক্তির মতঃ সে একে দেখে কিন্তু একে স্পর্শ
করে না। তার অন্তরে ও সত্তায় ঘৃণা বৃদ্ধি পেতে থাকে তাদের আচারণে যারা এ পৃথিবীর মাধ্যমে
প্রতারিত হয়েছে- যা শুধু আনবে হিসাব-নিকাশ
ও শাস্তি।” সে এ পৃথিবীকে
তার সাথে বদল করে নেয় যা তাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সন্তুষ্টির কাছে নিবে ও
ক্ষমা এনে দিবে।সে নিজেকে ধুয়ে ফেলে সেগুলো থেকে যেদিকে এ পৃথিবী তাকে আমন্ত্রণ করে
এবং এর জাগতিক অলংকার থেকে - এ পৃথিবী নিশ্চিহ্ন হওয়ার পানি দিয়ে।
যে ব্যক্তি কথা
গ্রাহ্য করে তার জন্য তা তিনটি জিনিস এনে দেয়।সেগুলো হলো, ক)সে যা করে তার জ্ঞান।
খ) সে যা জানে
সে অনুযায়ী কাজ।এবং
গ) যা সে জানে
না সে সর্ম্পকে জ্ঞান।
কথা গ্রাহ্য করার
শিকড় নিহিত আছে এর ফলাফল সম্পর্কে ব্যক্তির ভীতিতে, যখন সে দেখে যে সে শুরুতে এ থেকে
পূর্ণ বিরত থেকেছে।কথা গ্রাহ্য করা শুধু তাদের জন্যই সফল যাদের পবিত্রতা ও অন্তর্দৃষ্টি
আছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন,“ শিক্ষা নাও,
হে যাদের দৃষ্টি আছে” (সূরা হাশর:০২)।
তিনি আরও বলেছেন, “ কারণ নিশ্চয়ই
চোখগুলো অন্ধ নয়, কিন্তু অন্ধ হচ্ছে তাদের অন্তর যা আছে বুকের ভেতর।” (সূরা হাজ্জ:৪৬)
যখন আল্লাহ সুবহানাহু
ওয়া তায়ালা বিবেচনার মাধ্যমে কারো অন্তরের চোখ এবং অন্তর্দৃষ্টি খুলে দেন, তাহলে তিনি তাকে দিয়েছেন এক উচ্চ মাক্বাম
ও বিশাল সৌভাগ্য।
সন্তুষ্টি
যদি সন্তুষ্ট
কোন ব্যক্তি শপথ করে বলে যে সে তার দুই জগতের
বাসস্থানের দায়িত্বে থাকবে তাহলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাকে সে বিষয়ে সত্যায়ন
করবেন তার সন্তুষ্টির ব্যাপকতার মাধ্যমে তার আশাকে বাস্তবায়ন করে।
কীভাবে আল্লাহ
সুবহানাহু ওয়া তায়ালার বান্দাহ সন্তুষ্ট না হতে পারে সেসব নিয়ে যা তিনি তার জন্য নির্ধারণ
করেছেন? যখন তিনি বলেছেন, “ আমরা তাদের মধ্যে
জীবন উপকরণ বন্টন করি এ পৃথিবীর জীবনে।" (সূরা যুখরুফ : ৩২)
যে আল্লাহ সুবহানাহু
ওয়া তায়ালার প্রতি প্রাণ খুলে দেয় এবং তিনি যা চান এবং যখন চান সে বিষয়ে তাকে সত্যায়ন
করাতে উদাসীন থাকে না এবং যে তার রুবুবিয়্যাত(প্রতিপালকত্ব) সম্পর্কে ইয়াক্বীন রাখে
, ‘সে প্রত্যেক ব্যক্তির
জীবনোপকরণ নির্ধারিত মাত্রায় বন্টন-এর দায়িত্ব সরাসরি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার
হাতে’
বলে
স্বীকৃতি দেয় এবং বস্তুগত কারণগুলোকে স্বীকার করে না। যা দেওয়া হয়েছে তা নিয়ে সে সন্তুষ্ট
থাকে এবং সে চিন্তা, দুঃখ ও ক্লান্তি থেকে মুক্ত হয়ে যায়।যখন সে সন্তুষ্টিতে কমে যায়,
তখন সে কামনা-বাসনায় বৃদ্ধি পায়। এ পৃথিবীর জন্য লোভ সব খারাপের শিকড়; যার একটি আছে
সে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত নয় যদি না সে তওবা করে।
তাই রাসুলুল্লাহ
(সাঃ) বলেছেন,“ সন্তুষ্টি একটি
রাজ্য যা নিঃশেষ হয়ে যায় না।” এটি আল্লাহ সুবহানাহু
ওয়া তায়ালার সন্তুষ্টির জাহাজ, যে এতে আরোহণ করেছে এটি তাকে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। যা
তোমাকে দেয়া হয়নি তাতে উচ্চ আস্থা রাখো এবং যা তোমাকে দেওয়া হয়েছে তাতে আনন্দিত হও।
ধৈর্য ধরো তোমার মুসিবতে, কারণ নিশ্চয়ই তা সবচেয়ে বড় কাজ।
অপবাদ
সব মুসলমানের
জন্য অপবাদ নিষিদ্ধ এবং যে অপবাদ দেয় সে প্রত্যেকবারই গুনাহ করে।অপবাদ হলো যখন তুমি
কোন ব্যক্তি সম্পর্কে কিছু বলো যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার দৃষ্টিতে ত্রুটি নয়
অথবা যখন তুমি তিরস্কার কর যা জ্ঞানী ব্যক্তিরা প্রশংসা করে।
যে ব্যক্তি উপস্থিত
নেই তার সাথে সম্পর্কিত কোন বিষয়ে যদি আলোচনা করা হয় যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা
তিরস্কার করেছেন, যখন সে ব্যক্তি এ বিষয়ে অপরাধী তখন তা অপবাদ নয়, যদি সে শোনার পর
তা অপছন্দ করে তবুও, তাহলে তুমি সে ব্যক্তিকে ছোট করা থেকে মুক্ত। এটি এজন্য বলা হলো
যেন সত্য মিথ্যা থেকে আলাদা হয়ে যায় আল্রাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ও তাঁর রাসূলের পক্ষ
থেকে। তবে এর একটি পূর্বশর্ত আছে।তা হলো যে ব্যক্তি তা বলে সে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া
তায়ালার ধর্মে কোনটি সত্য ও কোনটি মিথ্যা খোঁজার জন্য বলবে।যদি সে ঐ ব্যক্তির বিরোধীতার
জন্যই শুধু বলে এবং বিষয়কে স্পষ্ট করার জন্য না বলে তাহলে তার অসৎ উদ্দেশ্যের জন্য
তাকে শাস্তি দেওয়া হবে, এমনও যদি হয় সে যা বলেছে তা সঠিক।
যদি তুমি সত্যই
কাউকে অপবাদ দিয়ে থাকো তাহলে তার কাছে ক্ষমা চাও।যদি তুমি ততটুকু না যাও অথবা সে পর্যায়ে
না পৌছাও তাহলে সেজন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে ক্ষমা চাও।অপবাদ ভালো কাজকে
খেয়ে ফেলে যেভাবে আগুন খেয়ে ফেলে কাঠকে।যেভাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা মুসাকে
ওহী করেছিলেন,“অপবাদদানকারী
হবে জান্নাতে প্রবেশের বেলায় সর্বশেষ ব্যক্তি, যদি সে তওবা করে। যদি সে তওবা না করে
তাহলে সে আগুনে প্রবেশ করবে সর্ব প্রথম।” যেভাবে আল্লাহ
সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন,“ তোমাদের মধ্যে
কেউ কি পছন্দ কর তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে? তোমরা তা ঘৃণা করবে।”(সূরা হুজরাত:১২)
অপবাদের বিভিন্ন
ধরণ ঘটে যখন তুমি কোন ব্যক্তির চরিত্র, বুদ্ধি, কাজ, ব্যবহার, বিশ্বাস, অজ্ঞতা এবং
এধরণের আরও কিছু সম্পর্কে উল্লেখ কর।
অপবাদের উৎস হতে
পারে নিচের দশটির কোন একটি।
ক) রাগ প্রকাশ
করা।
খ) অন্য লোকদের
খুশি করা।
গ) সন্দেহ করা।
ঘ) যাচাই-বাছাই
ছাড়াই কোন সংবাদে বিশ্বাস করা।
ঙ) খারাপ ধারণা
রাখা।
চ) ঈর্ষা করা।
ছ) তাচ্ছিল্য
করা।
জ) কারো মধ্যে
কোন কাজে আশ্চর্য হওয়া যা সম্পর্কে তার পুরো বুঝ নেই।
ঝ) অসন্তষ্টি
অথবা অন্যদের বিষয়ে অধৈর্য। এবং
ঞ) অন্যের ক্ষতির
মাধ্যমে নিজেকে অলংকৃত করা।
যদি তুমি ইসলাম
চাও তাহলে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করো, সৃষ্টিকে নয়, তখন অপবাদের পরিবেশে পরিস্থিতি তোমার
জন্য একটি শিক্ষা হবে এবং একটি ভুল কাজের বদলে একটি পুরস্কার দেওয়া হবে।
0 Comments