পরিচ্ছেদ : চৌদ্দ ( ইবাদত, গভীর ভাবনা, বিশ্রাম)


ইবাদত

ইবাদতের রীতিনীতি ও বাধ্যতামূলক বিষয়গুলো পালনে অধ্যাবসায়ী হও কারণ সেগুলো হচ্ছে উৎসঃ যে গুলো অর্জন করে এবং তা সঠিকভাবে পালন করে সে সবকিছুই পেল। সবচেয়ে ভালো ইবাদত হচ্ছে যা নিরাপত্তার কাছাকাছি আসে। এটি সবচেয়ে ক্ষতিমুক্ত এবং সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তা যতই ছোট হোক। যদি তুমি তোমার বাধ্যতামূলক ও অতিরিক্ত (নফল) নামায পড়ে থাকো তাহলে তুমি সত্যিকার ইবাদতকারী।

বাদশাহর গালিচায় পা রাখার বিষয়ে সাবধান থাকো যদি না তুমি তা কর নিজেকে মর্যাদাশূণ্য মনে করে, প্রয়োজন স্বীকার করে, ভয় করে এবং সম্মান দেখিয়ে। তোমার নড়াচড়াকে লোক দেখানো মুক্ত করো এবং তোমার গোপনকে কাঠিন্য মুক্ত করো।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “ যে ব্যক্তি নামায পড়ছে সে তার রবের সাথে কথা বিনিময় করছে।” তাই লজ্জিত থাকো তাঁর সামনে ‍যিনি তোমার গোপন বিষয় সম্পর্কে অবগত আছেন, তিনি তোমার কথাবার্তা শুনছেন এবং তোমার বিবেক যা লুকায় তাও জানেন। সেখানেই উপস্থিত থাকো যেখানে তিনি তোমাকে তা করতে দেখবেন যা তিনি চান তুমি কর এবং দেখবেন তা সম্পাদন করতে যা করার জন্য তিনি তোমাকে ডেকেছেন।যারা আমাদের আগে চলে গেছেন তারা নিজেদেরকে নিয়োজিত রেখেছিলেন একটি বাধ্যতামূলক নামায শেষ করার মুহূর্ত থেকে আরেকটি শুরু করার মুহূর্ত পর্যন্ত যেন তারা দু’টো নামাযই সম্পাদন করতে পারেন আন্তরিকভাবে ও সঠিকভাবে। মনে হচ্ছে আমাদের সময়ে বাধ্যতামূলক ইবাদত ছেড়ে দেওয়া একটি নৈতিকগুণে পরিণত হয়েছে যা হলো একটি দেহ থাকার মতো যার কোন আত্মা নেই।

আলী (রাঃ) ইবনে আল হুসাইন (রাঃ) বলেছেন, “ আমি আশ্চর্য হই ঐ ব্যক্তিকে নিয়ে যে অতিরিক্ত কিছু চায় অথচ বাধ্যতামূলক দায়িত্ব পরিত্যাগ করে; সে তা শুধু এজন্য করে যে তার এ বিষয়ে যথাযথ স্বীকৃতি নেই এবং এর প্রতি তার সম্মানের অভাব রয়েছে। মানুষকে তাঁর আদেশ মানতে প্রস্তুত করাতে এবং তাদের জন্য তা নির্বাচনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ইচ্ছাকে সে দেখতে পায় না।”


গভীর ভাবনা

এ পৃথিবীর যা অতীত হয়ে গেছে তার উপর গভীরভাবে ভাবো। এর কোন অংশ কি কারো জন্য রয়ে গেছে? কেউ কী রয়ে গেছে, হোক সে উচ্চ সম্মানিত অথবা মর্যাদাশূণ্য, ধনী অথবা দরিদ্র, বন্ধু অথবা শত্রু? একইভাবে এখানে যা ঘটেনি তার সাথে ঘনিষ্ঠ মিল রয়েছে যা ইতোমধ্যেই অতীত হয়েছে। পানির সাথে পানির যে মিল আছে তার চেয়ে বেশি। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “ মৃত্যু সতর্ককারী হিসেবে যথেষ্ট; তাক্বওয়া (সতর্কতা অবলম্বন) জীবনোপকরণ হিসেবে যথেষ্ট; ইবাদত পেশা হিসেবে যথেষ্ট, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ঘনিষ্ট বন্ধু হিসেবে যথেষ্ট; কোরআন সত্য-মিথ্যা স্পষ্ট করার জন্য যথেষ্ট।” এবং অন্য জায়গায় বলেছেন, “ এ পৃথিবীর যা বাকি আছে তা হলো দুঃখ-দুর্দশা ও পরীক্ষা। যদি কোন ব্যাক্তি রক্ষা পায় তাহলে তা ঘটে শুধু আন্তরিকভাবে আশ্রয় চাওয়ার মাধ্যমে। “ নুহ (আঃ) বলেছিলেন, “ আমি পৃথিবীকে পেয়েছি একটি বাড়ির মতো যার দু’টো দরজা আছে। আমি এর একটি দিয়ে প্রবেশ করেছি এবং অন্য দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেছি।”

 এরকমই হচ্ছে তার অবস্থা যাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা রক্ষা করেছেন। তাহলে তার অবস্থা কী যে এ পৃথিবীতে আরাম বোধ করে, এর উপরে নির্ভর করে, একে চাষ করার মাধ্যমে তার জীবনকে নষ্ট করে এবং যে পৃথিবীর চাহিদায় পূর্ণ?

গভীর ভাবনা হলো কাজগুলোর আয়না এবং খারাপ কাজগুলোর কাফফারা। এটি অন্তরের আলো, এবং অন্যদেরকে স্বাচ্ছন্দ্যের নিশ্চয়তা দেয় এবং আখেরাতের বাসস্থান লাভের জন্য উত্তম; এটি মানুষকে তার কাজকর্মের ফলাফলকে আগে ভাগেই দেখতে সাহায্য করে এবং জ্ঞান বৃদ্ধি করে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ইবাদত অতুলনীয় হয়ে দাঁড়ায় যখন এ গুণটি সাথে থাকে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “ এক ঘন্টার জন্য গভীর ভাবনা এক বছরের ইবাদতের চেয়ে উত্তম।”

গভীর ভাবনার মাক্বাম শুধু তারাই লাভ করে যাদেরকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বেছে নিয়েছেন ইরফানি নূর (মারেফাত) এবং তাওহীদের জন্য।


বিশ্রাম

বিশ্বাসী শুধু তখনই সত্যিকার বিশ্রাম অর্জন করে যখন সে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার মোলাক্বাত লাভ করে।যদিও বিশ্রাম এ চারটি জিনিসের মাধ্যমে লাভ করা যেতে পারে ঃ ‘ নিরবতা’ - যার মাধ্যমে তুমি বুঝতে পারো তোমার অন্তরের অবস্থা এবং তোমার সৃষ্টিকর্তার সাথে তোমার সত্ত্বার সম্পর্ক সম্পর্কে, ‘নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া’ - যার মাধ্যমে তুমি যুগের খারাপ বিষয়গুলো থেকে রক্ষা পাবে প্রকাশ্যে ও সত্তার ভেতরে; ‘ক্ষুধা’ - যা দেহের মাংসের ক্ষুধা ও লোভকে হত্যা করে এবং ‘রাত্রি জাগরণ; -  যা তোমার অন্তরকে আলোকিত করে, তোমার প্রকৃতিকে পবিত্র করে এবং তোমার আত্মাকে পরিষ্কার করে।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “ যদি কোন ব্যক্তি ভোর বেলায় নিজের অন্তরকে পায় প্রশান্ত, শরীরকে সুস্থ্ এবং সেদিনের জন্য খাবার , তা যেন এমন যে সারা পৃথিবী তার জন্য পছন্দ করা হয়েছে।” ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বিহ উপরের এবং নীচের কথাগুলো উদ্ধৃত করেছেন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) থেকে - যিনি বলেছেন. “ হে সন্তুষ্টি -  সম্মান ও ধন-সম্পদ তোমার কাছেই পাওয়া যায়। যে জিতে সে তোমার মাধ্যমেই জিতে।”

আবু আল দারদা বলেছেন, “ যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমার জন্য নির্দিষ্ট করেছেন তা আমাকে পাশ কাটিয়ে চলে যাবে না, এমনও যদি হয় তা বাতাসের পাখার উপর আছে” এবং আবু যার বলেছেণ, “ যে ব্যক্তি তার রবকে বিশ্বাস করে না তার গোপন বিষয় সব সময় প্রকাশ হয়ে যায়, যদি তা শক্ত পাথরের ভেতরেও বন্দী থাকে।” কেউ এর চেয়ে বেশি ক্ষতিতে নেই , এর চেয়ে জঘন্য এবং এর চেয়ে নীচে নেই সে ব্যক্তির চাইতে যে বিশ্বাস করে না যে তার রব তার জন্য নিশ্চয়তা দিয়েছেন এবং তাকে তিনি সৃষ্টি করার আগেই তার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ দান করেছেন। এর পরেও এ ব্যক্তি নির্ভর করে তার শক্তি, ব্যবস্থাপনা, প্রচেষ্টা এবং সংগ্রামের উপর এবং তার বরের দেয়া সীমানা অতিক্রম করে  পথ ও উপায় খোঁজ করতে গিয়ে যার কোন প্রয়োজন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তার জন্য রাখেন নি।

Reactions

Post a Comment

0 Comments