দুঃখ-কষ্ট
দুঃখ-কষ্ট হচ্ছে বিশ্বাসীর অলংকার এবং বুদ্ধিমান লোকদের জন্য সম্মানের পদক, কারণ সরাসরি এর মোকাবেলার জন্য প্রয়োজন দৃঢ়তা ও অনড় পা, এ দু’টোই বিশ্বাসের প্রমাণ। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “ আমরা নবীরা (আঃ) সবচেয়ে কঠিন দুঃখ-কষ্ট মোকাবিলা করি।আমাদের পর আসে বিশ্বাসীরা, এরপর তাদের মতো অন্যরা।”
আল্লাহ সুবহানাহু
ওয়া তায়ালার নিরাপত্তায় থেকে যে দুঃখ-কষ্টের স্বাদ গ্রহন করে সে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া
তায়ালার নেয়ামত থেকেও এতে বেশি আনন্দ বোধ করে।সে এর আকাঙ্খা করে যখন তা নেই, কারণ রহমতের
আলোগুলো দুঃখ-কষ্ট ও পরীক্ষার দাঁড়িপাল্লার নীচে থাকে।অনেকেই দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি
এবং নেয়ামতে ধ্বংস হয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার তাঁর কোনো বান্দাহর প্রশংসা করেন
নি - আদম থেকে মুহাম্মদ পর্যন্ত,যতক্ষণ পর্যন্ত না তিনি তাদের পরীক্ষা করেছেন এবং দেখেছেন
সে কীভাবে ইবাদতের দায়িত্ব পালন করেছে দুঃখ-কষ্টের ভেতর থেকে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া
তায়ালার সম্মানের পদক আসে একদম শেষ অবস্থায়, কিছু দুঃখ-কষ্ট আসে একদম শুরুতে।
যে দুঃখ-কষ্টের
পথ ছেড়ে দেয় সে অস্বীকার করে বিশ্বাসীদের প্রদীপকে, যারা আল্লাহর নিকটবর্তী তাদের আলোর
মিনারকে এবং যারা সঠিক পথে আছে তাদের পথপ্রর্দশককে।কোনো বান্দাহর ভেতরে ভালো কিছু
নেই যদি সে একটি পরীক্ষার জন্য অভিযোগ করে অথচ যার আগে এসেছে হাজার হাজার নেয়ামত এবং
যার পরে আসবে হাজার হাজার আরাম।যে দুঃখ-কষ্টের ভেতর ধৈর্য ধরে না সে নেয়ামতগুলো গ্রহনের
পর কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন থেকে বঞ্চিত হয়। একইভাবে যে নিয়ামতগুলোর কারণে দায়বদ্ধ অথচ কৃতজ্ঞতা
প্রদর্শন করে না সে দুঃখ-কষ্টে ধৈর্য ধরা থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়। যে এ দু’টোতেই প্রত্যাখ্যাত
হয় সে বিতাড়িত।
আইউব তার দোয়ায়
বলেছিল, “
হে
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা, নিশ্বয়ই সত্তরটি দুঃখ-কষ্ট আমার কাছে এসেছে যখন আমাকে
আপনি সত্তরটি আরাম ও স্বাচ্ছন্দ্য পাঠিয়েছেন।”
ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বিহ
বলেছেন,
“ বিশ্বাসীর
দুঃখ-কষ্ট হলো ঘোড়ার মুখের দড়ি এবং উটের নাকের দড়ি।” হযরত আলী বলেছেন, “
দৃঢ়তার
সাথে ঈমানের সম্পর্ক হলো দেহের সাথে মাথার সম্পর্কের মত।দৃঢ়তার মাথা হলো দুঃখ-কষ্ট,
কিন্তু শুধু তারা তা বোঝে যারা সৎ কাজ করে।”
ধৈর্য
আল্লাহ সুবহানাহু
ওয়া তায়ালার বান্দাহদের গভীরতম সত্তায় যে আলো ও পবিত্রতা রয়েছে, ধের্য তাকে প্রকাশ
করে দেয় এবং তাদের ভেতরে যে অন্ধকার ও শূণ্যতা আছে , দুশ্চিন্তা তাকে প্রকাশ করে দেয়।
প্রত্যেকেই ধৈর্যশীল হওয়ার দাবি করে কিন্তু শুধু বিনয়ীরা এতে দৃঢ়।প্রত্যেকেই দুঃশ্চিন্তা
অস্বীকার করে অথচ তা একজন মোনাফেক্বের ভেতরে স্পষ্ট।কারণ পরীক্ষা এবং দুঃখ-কষ্টের শুরুই
তোমাকে বলে দেয় কে সত্যবাদী ও কে মিথ্যাবাদী।
ধৈর্য হচ্ছে একটি
অনুভূতি যা সার্বক্ষণিকভাবে ব্যক্তির বিবেকে বজায় থাকে কিন্তু হঠাৎ কোন বিপর্যয়ে যা
ঘটে তাকে ধৈর্য বলা যায় না।দুঃশ্চিন্তা হলো তা যা মানুষের অন্তরকে বিচলিত করে একং ব্যক্তির
জন্য দুঃখ আনে, তার রং ও অবস্থা পরিবর্তন করে দেয়। প্রত্যেক বিষয় যার আরম্ভ হয় নম্রতাবিহীন,
অনুতাপবিহীন এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে বিনয়পূর্ণ দোয়া ছাড়া - তা আসে দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ
ব্যক্তির কাছ থেকে, ধৈর্যশীলদের কাছে থেকে নয়।ধৈর্যের শুরুটি তিক্ত কিন্ত এর শেষ কিছু
লোকের জন্য মিষ্টি; কিন্তু অন্যদের জন্য এর শুরু ও শেষ দু’টোই তিক্ত। যে
এতে এর শেষে প্রবেশ করেছে সে এতে প্রবেশ করেছে।যে এর শুরুতে প্রবেশ করেছে সে তা ছেড়ে
এসেছে।যে ব্যক্তি ধৈর্যের মূল্য জানে সে এছাড়া থাকতে পারে না।
মুসা (আঃ) এবং
খিযির (আঃ) -এর ঘটনায় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন, “
তুমি
কীভাবে তাতে ধৈর্য ধরবে যার বিষয়ে তোমার সম্পূর্ণ জ্ঞান নেই?” (সূরা কাহফ : ৬৮)
যে অনিচ্ছায় ধৈর্য
ধরেছে, যে অন্যদের কাছে অভিযোগ করে না এবং যখন তার পর্দা ছিড়ে যায় কিন্তু দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ
হয় না, সে সাধারণ লোকদের অন্তর্ভুক্ত। তার অংশ রয়েছে যে রকম আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা
বলেছেনম “ সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের।” (সূরা বাকারাহ
: ১৫৫)
আর তা হচ্ছে জান্নাত
ও ক্ষমার সুসংবাদ।যে দুঃখ-কষ্টকে খোলা অন্তরে গ্রহন করেছে এবং ধৈর্য ধরেছে শান্ত অবস্থা
ও মর্যাদা বজায় রেখে সে উচ্চস্থানীয়দের অন্তর্ভুক্ত এবং তার অংশ হলো যে রকম আল্রাহ
সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন,“ নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে
আছেন।” (সূরা আনফাল: ৪৬)
দুঃখ
দুঃখ হলো আধ্যাত্মিক
লোকদের চিহ্ন, যখন তারা নির্জনে থাকে তখন অদৃশ্য থেকে তাদের কাছে তা আসে তার ব্যাপকতার
মাঝ দিয়ে এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রশংসার তিব্রতার মাঝ দিয়ে।দুঃখ ভারাক্রান্তের
বাইরের সত্তা হলো সংকোচন এবং তার ভেতরের সত্তা হলো প্রসারণ।
সে লোকজনের সাথে
বসবাস করে সন্তুষ্টির সাথে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নিকটবর্তী জীবন নিয়ে। দুঃখী
ব্যক্তি গভীরভাবে ভাবে না,কারণ যে গভীরভাবে ভাবে সে তা করতে বাধ্য হয় কিন্তু দুঃখী
ব্যাক্তি প্রকৃতিগতভাবেই সে রকম। দুঃখ আসে ভেতর থেকে এবং ভাবনা আসে ঘটনা দেখে।এ দু’য়ের মাঝে পার্থক্য
আছে।আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ইয়াক্বুবের ঘটনায় বলেছেন, “ আমি শুধু আমারে শোক ও দুঃখের অভিযোগ করি
আল্লাহর কাছে এবং আমি আল্লাহর কাছ থেকে জানি যা তোমরা জানো না।” (সূরা ইউসুফ:৮৬)
এর কারণ হলো দুঃখের
অবস্থায় যে জ্ঞান অর্জিত হয় তা শুধু তারই জন্য এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এর
জন্য তাকে বাছাই করেছেন এবং পৃথিবীর বাকী সবাইকে তা থেকে বঞ্চিত করেছেন।যখন রাবি ইবনে
কুসাইমকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল কেন সে দুঃখ ভারাক্রান্ত, সে বলেছিলো, “ কারণ আমি আমার কাছে কিছু দাবি করেছি।” দুঃখের ডান দিকে দাঁড়ায় সংকোচন এবং বাম
দিকে দাঁড়ায় নিরবতা।দুঃখ হচ্ছে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার আরেফদের একটি চিহ্ন।
গভীর ভাবনা উচ্চস্থানীয়
এবং সাধারণ মানুষ উভয়ই করে। যদি আরেফদের অন্তর থেকে দুঃখকে এক ঘন্টার জন্য পর্দার আড়াল
করে দেওয়া হয় তাহলে তারা এর জন্য সাহায্য চাইবে কিন্তু তা যদি অন্যদের অন্তরে স্থাপন
করা হয় তারা তা অপছন্দ করবে। দুঃখ হলো প্রথম আর এরপরে আসে নিরাপত্তা ও সুসংবাদ। ঈমান
আনার পর এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে আশ্রয় চাওয়ার মাধ্যমে তাঁর প্রয়োজন
উচ্চারণ করার পর আসে গভীর ভাবনা। দুঃখ ভারাক্রান্ত ব্যক্তি ভাবে এবং যে ভাবে সে শিক্ষা
গ্রহন করে। তাদের প্রত্যেকের আছে একটি অবস্থা, একটি বিজ্ঞান, একটি পথ, সহনশীলতা ও সম্মান।
মধ্যপন্থা
মধ্যপন্থা হলো
একটি আলো যার সারমর্ম হলো বিশ্বাসের প্রাণকেন্দ্র, এর অর্থ হলো সেসব কিছুর সতর্কপূর্ণ
বিবেচনা যেগুলোকে তাওহীদ ও ইরফান (আধ্যাত্মিক জ্ঞান) নিন্দা করেছে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ)
বলেছেন,“মধ্যপন্থা হলো বিশ্বাসের অংশ।” মধ্যপন্থা গ্রহন করা হয় বিশ্বাসের মাধ্যমে
এবং বিশ্বাসগুলো গ্রহন করা হয় মধ্যপন্থার মাধ্যমে। মধ্যপন্থী ব্যক্তির সব ভালো। যাকে
মধ্যপন্থা দেওয়া হয়নি তার সব খারাপ, যদি সে ইবাদত করে ও সাবধানী হয় তবুও।
আল্লাহ সুবহানাহু
ওয়া তায়ালার ভয়ের উঠোনে মধ্যপন্থায় এক কদম ফেলা সত্তর বছর ইবাদতের চাইতে উত্তম। অন্যদিকে
ঔদ্ধত্য হলো মোনাফেক্বী, সন্দেহ ও অবিশ্বাসের শুরু।
রাসুলুল্লাহ
(সাঃ) বলেছেন, “ যদি তোমার কোন
লজ্জা না থাকে তাহলে যা ইচ্ছা করো।” এর অর্থ হচ্ছে
যখন মধ্যপন্থা তোমাকে ছেড়ে যায় তখন তোমাকে শাস্তি দেওয়া হবে সব ভালো অথবা সব খারাপ
কাজের জন্য যা তুমি করো।মধ্যপন্থার শক্তি আসে দুঃখ ও ভয় থেকে এবং মধ্যপন্থা হলো ভয়ের
বাসা।মধ্যপন্থার শুরু হচ্ছে ভয় এবং এর শেষ হচ্ছে স্বচ্ছ দৃষ্টি।একজন মধ্যপন্থী ব্যক্তি
নিজের বিষয়গুলো নিয়ে ব্যস্ত, লোকজনের কাছ থেকে দূরে এবং তারা যা করে তা থেকে দূরে।যদি
তারা সবাই মধ্যপন্থী লোকটিকে পরিত্যাগ করে তবুও।
রাসুলুল্লাহ
(সাঃ) বলেছেন, “ যখন আল্লাহ সুবহানাহু
ওয়া তায়ালা একজন বান্দাহর জন্য ভালো চান, তিনি তাকে তার ভালোগুণগুলো সম্পর্কে ভুলিয়ে
দেন, তার খারাপগুণগুলো তার চোখের সামনে তুলে
ধরেন এবং যারা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার স্মরণ করে না তাদের সাথে বসাকে তার কাছে
অপছন্দনীয় করে দেন।”
মধ্যপন্থা পাঁচ
প্রকারের। যথা :
ক) ভুল কাজের
জন্য লজ্জা।
খ) অক্ষমতার জন্য
লজ্জা।
গ) সম্মানিত সমসাময়িকের
সামনে মধ্যপন্থা।
ঘ) ভালোবাসার
মধ্যপন্থা।এবং
ঙ) ভয়ের মধ্যপন্থা।
এদের প্রত্যেকটিরই
অনুসারী আছে যাদেরকে মধ্যপন্থার এ বিভিন্ন শ্রেণিতে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
মারেফাহ
একজন আরেফ (যার
মারেফাহ আছে) থাকে মানুষের সাথে কিন্তু তার অন্তর থাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার
সাথে। যদি তার অন্তর চোখের এক পলকের জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে ভুলে যায় তাহলে
সে তাঁর টানে মারা যাবে।আরেফ হলেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ঘটনাগুলোর আমানত রক্ষাকারী,
তার গোপণ রহস্যের ভাণ্ডার, তাঁর নূর সমূহের সিন্দুক, তাঁর সৃষ্টিকুলের প্রতি তাঁর রহমতের
প্রমাণ, তাঁর বিজ্ঞানগুলোর হাতিয়ার এবং তাঁর নেয়ামত ও ন্যায় বিচারের পরিমাপ।সে লোকজনের
কোন প্রয়োজন অনুভব করে না, না কোন লক্ষ্যের, আর না এ পৃথিবীর। তার ঘনিষ্ট কেউ নেই আল্লাহ
সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ছাড়া।না আছে কোন বক্তব্য, না কোন ইশারা অথবা শ্বাস একমাত্র আল্লাহ
সুবহানাহু ওয়া তায়ালার মাধ্যমে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সাথে এবং আল্লাহ সুবহানাহু
ওয়া তায়ালার কাছ থেকে ছাড়া, কারণ সে তাঁর পবিত্রতার বাগানে আসা যাওয়া করছে এবং সে তাঁর
সবচেয়ে সূক্ষ্ম সহানুভূতিতে সমৃদ্ধ। মারেফাহ হচ্ছে শিকড় যার শাখা হচ্ছে বিশ্বাস।
আল্লাহর ভালোবাসা
যখন আল্লাহ সুবহানাহু
ওয়া তায়ালার ভালোবাসা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার বান্দাহর গভীরতম সত্তায় স্থান করে
নেয় তখন তা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার স্মরণ ছাড়া আর সব চিন্তাকে বের করে দেয়। সব
মানুষের মধ্যে আল্লাহ প্রেমকই সত্তার ভেতরে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার জন্য সবচেয়ে
মোখলেস (আন্তরিক)। সে তার কথায় সবচেয়ে সত্যবাদী, প্রতিশ্রুতি রক্ষায় সবচেয়ে বিশ্বস্ত,
কাজকর্মে সবচেয়ে বুদ্ধিমান, যিকর-এ সবচেয়ে বিশুদ্ধ এবং ইবাদতে তার নিজ সত্তাকে নিয়োজিত
করায় শ্রেষ্ঠতম।
ফেরেশতারা পরস্পর
প্রতিযোগিতা করে তার সাথে কথা বলার জন্য এবং তাকে দেখেছে বলে গর্ব করে বেড়ায়। তার মাধ্যমে
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তার ভূমিকে সমৃদ্ধি দেন এবং তার সম্মানে আল্লাহ সুবহানাহু
ওয়া তায়ালা তাঁর বান্দাহদের সম্মানিত করেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা জনগণকে দান
করেন যখন তারা তাঁর কাছে চায় এই ব্যক্তির অধিকারের মাধ্যমে এবং তাদের দুঃখ-কষ্ট দূর
করে দেন তাঁর রহমতের মাধ্যমে।যদি জনগণ জানতো তারা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে
কী সম্মানপ্রাপ্ত তাহলে তারা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নিকটবর্তী হতে চাইতো না
তাদের পায়ের ধুলোর মাধ্যমে ছাড়া।
আমিরুল মুমিনীন
বলেছেন, “ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ভালোবাসা
হলো একটি আগুন যা কোন কিছুর পাশ দিয়ে যায় না তাকে পুড়িয়ে না ফেলে আল্লাহ সুবহানাহু
ওয়া তায়ালার নূর কোন কিছুর ওপর হাজির হয় না একে আলোকিত না করে।
আল্লাহ সুবহানাহু
ওয়া তায়ালার আকাশগুলো কোনো মেঘ সৃষ্টি করে না এর নিচে যা আছে তাকে না ঢেকে; আল্লাহ
সুবহানাহু ওয়া তায়ালার বাতাস কোনো কিছুর ওপর প্রবাহিত হয় না তাকে না নাড়িয়ে। আল্রাহ
সুবহানাহু ওয়া তায়ালার পানি সবকিছুকে জীবন দেয় এবং আল্রাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার পৃথিবীর
মাটি থেকে সবকিছু জন্মায়।যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে ভালোবাসে তাকে সব সম্পদ
এবং ক্ষমতা দেওয়া হয়।”
রাসুলুল্লাহ
(সাঃ) বলেছেন, “ যখন আল্লাহ সুবহানাহু
ওয়া তায়ালা আমার উম্মতের ভেতর কোন বান্দাহকে ভালোবাসেন, তিনি তাঁর ভালোবাসাকে স্থাপন
করেন তাঁর বন্ধুদের অন্তরে, ফেরেশতাদের ও তাঁর আরশ বহনকারীদের রুহের ভেতর যেন তারা
তাকে ভালোবাসে।এ প্রেমিকের আছে অঢেল প্রশান্তি এবং কেয়ামতের দিনে সে আল্লাহ সুবহানাহু
ওয়া তায়ালার কাছে সুপারিশ করতে পারবে।”
আল্লাহ সুবহানাহু
ওয়া তায়ালার জন্য ভালোবাসা
যে আল্লাহ সুবহানাহু
ওয়া তায়ালার জন্য ভালোবাসে সে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ভালোবাসার পাত্র এবং যাকে
ভালোবাসা হয় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কারনে সেও আল্লাহর ভালোবাসার পাত্র।যেহেতু
তারা পরস্পরকে ভালোবাসে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কারণে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,“ মানুষ যাকে ভালোবাসে সে তার সাথেই থাকে।
যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার পথে কোন বান্দাহকে ভালোবাসে সে আল্লাহকে ভালোবাসে।কেউ
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে ভালোবাসে না সে ছাড়া যাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা
ভালোবাসেন।” তিনি আরও বলেছেন,“ রাসুল (সাঃ)-এর পর মানুষের মাঝে তারাই
এ পৃথিবীতে ও আখেরাতে উত্তম যারা পরস্পরকে ভালোবাসে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কারণে।” আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ছাড়া অন্য
কোন কারণের উপর ভিত্তি করে যে ভালোবাসা আসে তা শত্রুতা আনে। - শুধু এ দু’কারণ ছাড়া , কারণ তারা আসে একই উৎস থেকে।
এদের ভালোবাসা সবসময় বৃদ্ধি পায় এবং কখনও কমে না।যেমন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা
বলেছেন, “বন্ধুরা সে দিন পরস্পর শত্রু হয়ে যাবে
শুধু তারা ছাড়া যারা (অন্যায়ের বিরুদ্ধে)সতর্ক পাহারা দেয়।” (সূরা যুখরুফ:৬৭)
কারণ ভালোবাসার
শিকড় হলো সবকিছু থেকে মুক্ত হওয়া একমাত্র মাহবুব (যাকে ভালোবাসা হয়) ছাড়া।
আমিরুল মুমিনীন
বলেছেন, “ জান্নাতে সবচেয়ে ভালো ও সবচেয়ে যা মিষ্টি-মধুর
তা হলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ভালোবাসা, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাতে ভালোবাসা
এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রশংসা।” আর আল্লাহ সুবহানাহু
ওয়া তায়ালা বলেছেন,“ তাদের শেষ দোয়া
হবে, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি জগৎসমূহের প্রতিপালক।” (সূরা ইউনুস:১০)
কারণ যখন তারা
জান্নাতের নেয়ামতগুলো দেখে তখন তাদের ভেতরে ভালোবাসা জেগে ওঠে এবং তখন তারা শব্দ করে
বলে ওঠে “ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি জগৎসমূহের
প্রতিপালক।”
আল্লাহকে পাওয়ার
আকাঙ্খা
যে আকাঙ্খা করে
সে না চায় খাবার, না পায় পানি পানে কোন তৃপ্তি, না সে সহজে উত্তেজিত হয়, না সে কারো
ঘনিষ্ট এমনকি তার নিকট বন্ধুদের সাথেও না, না সে আশ্রয় খোঁজে কোন বাড়িতে, না সে বাস
করে কোন শহরে, না সে কোন পোশাক পরে এবং না সে তার প্রয়োজন অনুযায়ী যথেষ্ট বিশ্রাম নেয়।
সে রাত দিন আল্লাহ
সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ইবাদত করে, তার আকাঙ্খার লক্ষ্যে পৌছানোর আশায়। সে তাঁর সাথে
কথা বলে আকাঙ্খার জিহ্বা দিয়ে - তার গভীরতম সত্তায় যা আছে তা প্রকাশ করে। মুসা (আঃ)
সম্পর্কে এটিই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন যখন সে তার রবের মোলাকাতে গেলোঃ
“ আমি আপনার কাছে দ্রুত আসছি হে আমার রব,
যেন আপনি সন্তুষ্ট হন।”(সূরা ত্বোয়া-হা:৮৪)
রাসুলুল্লাহ
(সাঃ) তাঁর অবস্থা এভাবে বর্ণনা করেছেন,“সে না খেতো, না
পান করতো, না ঘুমাতো, না সে এর কোন কিছু চেয়েছে চল্লিশ দিন ধরে আসা ও যাওয়াতে - তার
রবের প্রতি তার আকাঙ্খার কারণে।”
যখন তুমি আকাঙ্খার এলাকায় প্রবেশ কর তখন তাকবীর বলো তোমার জন্য এবং এ পৃথিবীতে তোমার আশা আকাঙ্খাগুলোর জন্য।বিদায় জানিয়ে দাও সব পরিচিত জিনিসকে এবং সবকিছু থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও শুধু তিনি ছাড়া যাকে তুমি সবচেয়ে বেশি চাও।‘লাব্বায়েক’(আপনার খেদমতে হাজির)শব্দটি বলো তোমার জীবন ও মৃত্যুর মাঝেঃ “তোমার খেদমতে হে আল্লাহ, তোমার খেদমতে!’ তখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তোমার পুরস্কারকে করবেন মহান। যে ব্যক্তি আকাঙ্খা করে সে ডুবন্ত মানুষের মত, তার চিন্তা শুধু রক্ষা পাওয়া এবং ভুলে যায় বাকী সবকিছু।
0 Comments