পরিচ্ছদ : উনিশ (ভ্রাতৃত্ববোধ, পরামর্শ, সহনশীলতা, অন্যদের উদাহরণ অনুরণ করা)


ভ্রাতুত্ববোধ


তিনটি জিনিস প্রত্যেক যুগেই বিরল। জিনিসগুলো হলো .........

ক) আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কারণে ভ্রাতৃত্ব।

খ) একজন ধার্মিক স্নেহাশীল স্ত্রী। যে তোমাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রতি  বিশ্বাসে সাহায্য করে। এবং

গ) একজন হেদায়েত প্রাপ্ত পুত্র সন্তান।

যে এ তিনটি জিনিস পায় সে দুই জগতের কল্যাণ লাভ করেছে এবং এ পৃথিবীর ও আখেরাতের পূর্ণ অংশ পেয়েছে। কোন ব্যক্তিকে ভাই হিসেবে নেয়াতে সাবধান থাকো যখন তুমি লোভ, ভয়, ঝোঁক, টাকা-পয়সা, খাবার ও পানির কারণে উদ্যোগী হয়েছো। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কারণে ও তাকে ভয় করে ভ্রাতৃত্ব খোঁজ করো যদি তা পৃথিবীর আরেক প্রান্তেও হয় এবং যদি তার খোঁজে তোমার সারা জীবনও ব্যয় করে ফেলো। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এ পৃথিবীর উপরে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) - এর পরে তাদের চাইতে ভালো কারো রাখেননি, না তিনি কোন বান্দাহকে দিয়েছেন তাদের খুঁজে পাওয়ার সফলতার মত কোন নেয়ামত। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন, “ বন্ধুরা সেদিন হবে পরস্পরের শত্রু শুধু তারা ছাড়া যারা সতর্ক পাহারা দেয় (অন্যায়ের বিরুদ্ধে)।” ( সূরা যুখরুফ ঃ ৬৭)

আমি বিশ্বাস করি আজকাল যদি কেউ ক্রটিবিহীন বন্ধু খোঁজে তাহলে সে বন্ধুহীন অবস্থায় থাকবে। তুমি কি দেখো না আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তার রাসুল (সাঃ) - এর উপর প্রথম যে সম্মানের চিহ্ন এঁকে দিয়েছিলেন, তা হলো একজন বিশ্বস্ত বন্ধু ও সাহায্যকারী, ঈমানের দিকে তাদের আহ্বানের কথা জানাজানি হওয়ার পর? [ইমাম আলী (আঃ)]। ( অনুবাদক)

একইভাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সবচেয়ে বেশি ঐশী মূল্যের যে উপহার তার বন্ধুদের , সমর্থকদের (আউলিয়া), বিশুদ্ধ বন্ধুদের এবং ওয়াসীদের দিয়েছেন তা হলো  তাঁর রাসূলের (সাঃ) সাহচর্য। এটি প্রমাণ করে যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সম্পর্কে জ্ঞান- এর পরে দুই জগতের মধ্যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কারণে সাহচর্য ও তাঁর জন্য ভ্রাতৃত্বের চেয়ে বেশি ঐশী মূল্যের, এর চেয়ে বেশি ভালো অথবা এর চেয়ে বেশি পবিত্র কোন নেয়ামত নেই।


পরামর্শ

ঈমান তোমার কাছে যা দাবী করে সে বিষয়ে পরামর্শ করো তাঁর সাথে যার এ পাঁচটি গুণ আছে। বুদ্ধি, জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, সৎ উপদেশ এবং তাক্বওয়া (সতর্কতা)। যদি তুমি এ পাঁচটি জিনিস কোন ব্যক্তির ভেতর পাও তাহলে সে সুযোগ কাজে লাগাও, দৃঢ় হও এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার উপর নির্ভর করো। এটি তোমাকে যা সঠিক সেখানে নিয়ে যাবে।

আর যে সব বিষয় এ পৃথিবীর এবং তা ঈমানের সাথে সম্পর্কিত নয়, এগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নাও এবং এরপর এগুলো সম্পর্কে  আর চিন্তা করো না। তাহলে তুমি রিযক- এর বরকত এবং আনগত্যের মিষ্টতা লাভ করবে।

জ্ঞান অর্জিত হয় আলোচনার মাধ্যমে। বুদ্ধিমান সে যে নুতন জ্ঞান লাভ করে আলোচনার মাধ্যমে এবং তা তাকে লক্ষ্য অর্জনে পথ দেখায়। উপযুক্ত পরামর্শ দাতার সাথে আলোচনা করা হলো আকাশগুলো ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং এ দু’য়ের ধ্বংসের উপর গভীরভাবে ভাবার মত, কেননা ব্যক্তির ভাবনা যত গভীর ও প্রখর হয় এ দু’য়ের উপর মারেফতের নূরের তত গভীরে সে প্রবেশ করে এবং তা তার বুঝকে এবং ইয়াক্বীনকে বৃদ্ধি করে।

তার কাছ থেকে কোন উপদেশ নিও না যাকে তোমার বুদ্ধি সায় দেয় না, যদি সে তার সুক্ষ্ন আলোচনা ও সুক্ষ্ন বাচ- বিচারের জন্য বিখ্যাতও হয়। যখন তুমি তার কাছ থেকে উপদেশ নাও যাকে তোমার অন্তর বিশ্বাস করে, তাহলে সে যে উপদেশ দেয় তার সাথে দ্বিমত হয়ো না, যদিও তুমি যা চাও তা তার বিপরীতও হয়। নিশ্চয়ই নফস সত্যকে গ্রহন ও এর বিপরীতকে একত্রে ধারণ করে; আর তা হলো সে অন্য সত্যগুলোও গ্রহন করে যা তার কাছে আরও স্পষ্ট। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন, “ তাদের সাথে পরামর্শ করো (প্রয়োজনীয়) বিষয়ে।”  (সূরা আল ইমরান ঃ ১৫৯)

এবং আরো বলেছেন, “ তাদের নিয়ম হলো তাদের নিজেদের মাঝে পরামর্শ করা।” (সূরা শূরা ঃ ৩৮)

অর্থাৎ তারা এ বিষয়ে পরামর্শ করে।


সহনশীলতা

সহনশীলতা হচ্ছে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার একটি প্র্রদীপ যা ধারণকারীকে তাঁর (দেয়া) উচ্চ মর্যাদায় নিয়ে যায়, কোন ব্যক্তি সহনশীল হতে পারে না যদি না তাকে মারেফাতের নূর এবং তাওহীদ দেওয়া হয়। সহনশীলতার চারটি দিক রয়েছে। ‍দিকগুলো হলো - 

ক) যখন কোন মানুষকে প্রশংসা করা হয় কিন্তু এরপর তাকে নীচে নামানো হয়।

খ) যখন সে সত্যবাদী তখন তাকে মিথ্যাবাদী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়।

গ) যখন সে মানুষকে সত্যের দিকে ডাকে তথন তাকে তিরস্কার করা হয়।

ঘ) সে কোন অপরাধ করা ছাড়াই আহত হয় এবং সে যখন তার অধিকার দাবি করে তারা তার বিরোধীতা করে।

যখন এগুলোর প্রত্যেকটিকে তুমি প্রাপ্য অংশ দিয়েছো তখন তুমি লক্ষ্য অর্জন করেছো।যখন তুমি অর্ধেক বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ থেকে মুখ ঘুরিয়ে ‍নিয়েছো এবং তাকে কোন উত্তর দাও নি তখন লোকজন তোমার সাহায্যে এগিয়ে আসবে, কারণ যে ব্যক্তি নির্বেোধ লোকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে সে আগুনে কাঠ দেয়।

রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “ বিশ্বাসী হচ্ছে পৃথিবীর মাটির মতো ; মানুষ তা থেকে উপকারিতা লাভ করে যখন তারা এর উপর থাকে।” যে লোকজনের দুর্ব্যবহার সহ্য করতে পারে না সে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারবে না। কারণ তাঁর সন্তুষ্টি সাধারণ মানুষের অপছন্দের সাথে ঘনিষ্টভাবে যুক্ত।

বর্ণিত আছে যে এক ব্যক্তি আহনাফ ইবনে  ক্বায়েসকে বললো, “ তুমি আমাকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিচ্ছো।” সে উত্তরে বললো, “ আমি তোমার সাথে সহনশীল থাকবো।”

রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, “ আমাকে পাঠানো হয়েছে সহনশীলতার কেন্দ্র, জ্ঞানের খনি এবং ধৈর্যের বাড়ি হিসেবে।” তিনি সত্য বলেছেন যখন বলেছেন, “ সত্যিকার সহনশীলতা হলো যখন তুমি কোন ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দাও যখন সে তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে এবং তোমার বিরোধীতা করে অথচ তোমার শক্তি আছে তার ‍উপরে প্রতিশোধ নেওয়ার।” যেভাবে দোয়াতে বলা হয়েছে, “ হে আমার আল্লাহ, আপনি দান ও সহনশীলতায় খুব বেশি প্রশস্ত আমার কর্মকাণ্ডের জন্য আমাকে শাস্তি দেয়া এবং আমার ভুলের জন্য আমাকে বেইযযতি করার জন্য।”


অন্যদের উদাহরণ অনুসরণ করা

অন্যের উদাহরণ অনুসরণ করা এর চাইতে বেশি কিছু নয় যা রুহকে দান করা হয়েছিল তার শুরুতে, যখন সময়ের নূরকে মিশ্রিত করা হয়েছিল চিরকালের নূরের সাথে। কোনো নমুনাকে অনুসরণ করা বাইরের ক্রিয়াকলাপকে গ্রহন করা বোঝায় না।, এটি ধর্মের প্রজ্ঞাবানদের মাঝে, আউলিয়া ও ইমামদের (আঃ) সাথে পার্থক্য দাবি করে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন, “ সেদিন আমরা প্রত্যেক জাতিকে তাদের ইমামসহ ডাকবো।” ( সূরা বনী ইসরাইল : ৭১ ) 

অর্থ্যাৎ যে নিজেকে অস্বিকার করে অন্য কারো” অন্তররের অনুসরণ করে, সে পবিত্র। অন্য জায়গায় বলেছেন, “ যখন শিংগায় ফু দেওয়া হবে , সে দিন তাদের নিজেদের মধ্যে আর কোন সম্পর্কের বন্ধন থাকবে না, না তারা কেউ কারো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে।” ( সূরা মু’মিন ঃ ১০১)

আমিরুল মুমিনীন বলেছেন, “ আত্মাগুলো এক একটি সৈন্যদল। যারা পরস্পরকে জানে তারা ঘনিষ্ঠ এবং যারা পরস্পরকে জানে না তারা পরস্পর দ্বিমত পোষণ করে।”  মুহাম্মাদ ইবনে হানাফিয়াকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল কে তাকে ভালো আচরণ শিখিয়েছে। সে বলেছিল, “ আমার রব আমাকে সু-আচরণ শিখিয়েছেন আমার ভিতরে। বুদ্ধিমান ও অন্তরর্দৃষ্টি সম্পন্ন লোকদের মাঝে আমি ভালো যা দেখি তাই আমি অনুসরণ করি এবং ব্যবহার করি; মূর্খ লোকদের মাঝে আমি যা ঘৃণ্য দেখি তা আমি এড়িয়ে যাই ও চিরদিনের জন্য তা পরিত্যাগ করি।আর তা আমাকে জ্ঞানের পথে এনেছে। দৃঢ় বিশ্বাসীর জন্য আমাদের উদাহরণ অনুসরণ করার চেয়ে নিরাপদ আর কোন পথ নেই, কারণ তা হচ্ছে সবচেয়ে স্পষ্ট পথ এবং ত্রুটিহীন লক্ষ্য ।” আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাঁর শ্রেষ্ট সৃষ্টি মুহাম্মদকে (সাঃ) বলেছেন, “ এরাই তারা যাদের আল্লাহ পথ দেখিয়েছেন। অতএব তাদের হেদায়েত অনুসরণ করো।” ( সূরা আন’আম ঃ ৯০)

অন্য জায়গায় তিনি বলেছেন, “ এরপর তোমার কাছেআমরা ওহী পাঠালামঃ হানিফ (আল্লাহর প্রতি নিবদ্ধ)  ইবরাহীমের বিশ্বাসকে অনুসরণ করো।” (সূরা নাহল : ১২৩)

যদি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ধর্মে একটি নমুনার অনুসরণের চাইতে আরও সরল সোজা কোন পথ থাকতো তাহলে তিনি তাঁর রাসুল (সাঃ) এবং তাঁর সমর্থকদের জন্য উল্লেখ করতেন।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “ অন্তরে একটি নূর (আলো) আছে যা জ্বলে উঠে শুধু সত্যকে অনুসরণ করলে এবং সত্য পথের দিকে যেতে চাইলে।” এটি রাসুল (সাঃ) - এর নূরের একটি অংশ যা বিশ্বাসীদের অন্তরে আমানত দেওয়া হয়েছে।

Reactions

Post a Comment

0 Comments