পরিচ্ছদ : ছয় ( হজ্ব, যাকাত, নিয়ত)

 

হ্জ্ব

যদি তুমি হজ্বে যেতে চাও , তাহলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তোমার অন্তরকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রতি  নিবদ্ধ করো একে বিচ্ছিন্ন করে এবং তোমার ও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার মাঝে  প্রত্যেক বাধা থেকে একে মুক্ত করে। তোমার সৃষ্টিকর্তার উপরে তোমার সব বিষয় ছেড়ে দাও, তাঁর উপর নির্ভর করো তোমার প্রত্যেক কর্মে ও স্থিরতার প্রত্যেক মুহুর্তে, আত্মসমর্পণ করো তাঁর আদেশ, সিদ্ধান্ত এবং রায়ের কাছে। পরিত্যাগ করো এ পৃথিবীকে, বিশ্রামকে এবং সব সৃষ্টিকে। সে সব দায়িত্ব পালন করো যেগুলো তুমি অন্য লোকদের জন্য পালন করতে দায়বদ্ধ। নির্ভর করো না তোমার রিযক্বের উপর, যে পশুর উপর তুমি আরোহণ করো, তোমার সাথীদের উপর, না তোমার খাদ্য এবং তোমার যৌবন ও না তোমার সম্পদের উপর। কারণ ভয় করো যে এগুলো তোমার শত্রু হয়ে যাবে এবং তোমার জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াবে। এভাবে তুমি বুঝতে পারবে যে কোন ক্ষমতা ও কোন শক্তি নেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার অভিভাবকত্ব (বেলায়েত) ও তাঁর পক্ষ থেকে সফলতা দান করা ছাড়া।

হজ্বের জন্য প্রস্তুতি নাও সে ব্যক্তির মতো যে ফেরত আসবে আশা করে না। ভালো লোকদের সাথী হও এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ও রাসুলুল্লাহ (সাঃ) - এর প্রতি তোমার সব দায়িত্ব পালনে পরিশ্রমী হও। যত্নবান হও সৌজন্য দেখানোতে, অধ্যাবসায়তে, ধৈর্য ধরাতে, কৃতজ্ঞতা স্বীকারে, দয়া করাতে এবং উদারতায় - সব সময় অন্যকে নিজের আগে রেখে, তাদেরকেও যারা তোমাকে প্রত্যাখ্যান করে। এরপর ওযু করো আন্তরিক তওবার পানি দিয়ে অন্যায় কাজের কারণে।পোষাক পরো সত্যবাদীতার, পবিত্রতার, বিনয়ের এবং ভয়ের।হজ্বের পোষাক পরে নিজেকে বিরত রাখো প্রত্যেক জিনিস থেকে যা তোমাকে বাধা দেয় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার স্মরণে। নয়তো তা তোমাকে বাধা দিবে তাঁর প্রতি আনুগত্য প্রকাশে।

         তাঁর আহ্বানে সাড়া দাও এক উত্তর দিয়ে যার অর্থ স্পষ্ট, বিশুদ্ধ এবং আন্তরিক। যখন তুমি তাঁকে ডাকো, তাঁর প্রতি তোমার বিশ্বাসকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখো। তাওয়াফ করো তোমার অন্তর দিয়ে ফেরেশতাদের সাথে যারা আরশকে তাওয়াফ করে যেভাবে তুমি তাওয়াফ করো মুসলিমদের সাথে যারা কাবাকে প্রদক্ষিণ করে। দ্রুত এগিয়ে যাও যখন তুমি দৌড় দাও ভয়ে, তোমার কামনা বাসনা থেকে, শক্তি ও ক্ষমতা সম্পর্কে ব্যক্তিগত সব অনুমান থেকে নিজেকে মুক্ত করে। যখন তুমি মিনাতে যাও পিছনে ফেলে যাও কথা গ্রাহ্য না করার স্বভাবকে এবং ভুলগুলোকে। তা চেও না যা তোমার জন্য হারাম এবং যা পাওয়ার যোগ্য তুমি নও। তোমার দোষগুলো স্বীকার করো আরাফাতে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সাথে তোমার চুক্তি মেলে ধরো, তাঁর তাওহীদের শপথের মাধ্যমে তাঁর নিকটবর্তী হও ও তাঁকে ভয় করো মুযদালিফাতে। তোমার আত্মা নিয়ে সর্বোচ্চ সমাবেশে আরোহণ করো যখন তুমি আরাফাতের পর্বতে আরোহণ করো।কামনা, বাসনা ও লোভের গলাকে কেটে ফেলো কোরবানীতে। পাথর মারো তোমার ক্ষুধাকে, হীন অবস্থাকে, অশ্লীলতাকে এবং দূষণীয় কাজগুলোকে যখন তুমি আক্বাবাহর স্তম্ভকে পাথর ছুঁড়ে মারো। তোমার বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ দোষগুলোকে কামিয়ে ফেলো যখন তুমি তোমার মাথা কামাও এবং প্রবেশ করো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নিরাপত্তা বেষ্টনিতে তাঁর আশ্রয়ে তাঁর চাদরের ভিতরে, তাঁর নিরাপত্তার ঘরে এবং তাঁর সতর্ক পাহারার ভিতরে এবং তোমার আশা আকাঙ্খার পিছনে ছোটা পরিত্যাগ করো তাঁর পবিত্র দরবারে প্রবেশ করে।বায়তুল্লাহায় যাও এবং এর চারদিকে হাঁটো এর মালিক ও তাঁর প্রজ্ঞাকে, তাঁর মর্যাদাকে ও তাঁর শক্তিকে প্রশংসা করো। পাথরকে (হাযরে আসওয়াদ) জড়িয়ে ধরো তাঁর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থেকে এবং তাঁর শক্তির সামনে বিনীত হও। তাঁকে ছাড়া সবকিছু পরিত্যাগ করো বিদায়ী তাওয়াফে। তোমার আত্মা ও তোমার অভ্যন্তরীণ সত্তাকে পবিত্র করো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সাথে মোলাকাতের জন্য, যে দিন তুমি তাঁর  মোলাকাত লাভ করবে ‘সাফা’-তে দাঁড়িয়ে।

মারওয়াহতে নিজের গুণাবলী নিশ্চিহ্ন করে আল্লাহর কাছ থেকে সাহস ও সৌজন্য গ্রহন করো। তোমার হজ্বের অবস্থাগুলোকে সামঞ্জস্য বজায় রাখো এবং তোমার রবের সাথে যে চুক্তি তুমি করেছো তা পূরণ করো, যার জন্য তুমি বিচার দিনে তাঁর কাছে দায়বদ্ধ। জেনে রাখো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা হজ্বকে বাধ্যতামূলক করেছেন এবং তিনি তাঁর বিষয়ে অন্য সব ইবাদত থেকে এটিকে বাছাই করেছেন যখন তিনি বলেছেন, “আল্লাহর জন্য আল্লাহর ঘরে হজ্ব মানব জাতির উপর বাধ্যতামূলক এবং প্রত্যেকের উপরে যারা সেখানে যেতে সক্ষম।” (সূরা আলে-ইমরান : ৯৭)

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) হজ্বের আনুষ্ঠানিক কর্মকাণ্ডগুলোকে সাজিয়েছেন মৃত্যু, কবর, পুনরুত্থান এবং বিচার দিনের প্রস্তুতি ও ইঙ্গিত হিসেবে। মানব জাতির জন্য এ শিক্ষায় তিনি তাদের মধ্যে পার্থক্য করেছেন - কারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং কারা আগুনে প্রবেশ করবে, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হজ্বের আনুষ্ঠানিক কর্মকাণ্ডগুলো সাজিয়ে যাদের বুদ্ধি ও প্রজ্ঞা আছে তাদেরকে দেখিয়ে।

যাকাত

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য বাধ্যতামূলক দান (যাকাত) তোমার শরীরের প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে প্রাপ্য। এমনকি তোমার প্রত্যেক চুলের গোড়া থেকেও। প্রকৃতপক্ষে তোমার জীবনের প্রত্যেক মুহূর্তে যাকাত বাধ্যতামূলক। চোখের যাকাত হলো সহানুভূতিসহ দৃষ্টিপাত এবং কামনা বাসনার দৃষ্টি ও এধরনের জিনিস থেকে চোখকে সরিয়ে রাখা। কানের যাকাত হলো সবচেয়ে ভালো শব্দ শোনা, যেমন- প্রজ্ঞা, কোরআন, বিশ্বাসের জন্য লাভজনক বিষয়গুলো যেমন, সতর্কবাণী; এবং এর বিপরীতগুলো  এড়িয়ে চলা যেমন- মিথ্যা, অপবাদ এবং এরকম জিনিস।

জিহ্বার যাকাত হলো মুসলমানদের সৎ উপদেশ দেয়া, যারা উদাসিন তাদেরকে জাগ্রত করা, অনেক তাসবীহ এবং যিকর করা এবং এরকম অন্যান্য জিনিস।

হাতের যাকাত হলো অন্যের জন্য টাকা-পয়সা খরচ করা, তোমাকে দেয়া আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নেয়ামতগুলোর বিষয়ে উদার হওয়া, জ্ঞান ও তথ্য লিখে রাখাতে তা ব্যবহার করা যার মাধ্যমে অন্য মুসলমানেরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার আনুগত্যে লাভবান হবে এবং একে খারাপ থেকে নিয়ণ্ত্রণ করা। পায়ের যাকাত হলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রতি দায়িত্ব পালনে দ্রুত যাওয়া, যেমন- ধার্মিক লোকদের সাক্ষাতে যাওয়া, ‍যিকর-এর সমাবেশে যাওয়া, লোকজনের মাঝে সম্পর্ক ঠিক করে দেয়া, আত্মীয়তার বন্ধন বজায় রাখা, জিহাদে নিয়োজিত হওয়া এবং এমন জিনিস করা যা তোমার অন্তরকে সুস্থ এবং তোমার বিশ্বাসকে শুদ্ধ করবে।

আমরা এখানে কিছু যাকাত- এর পথ উল্লেখ করেছি, যেগুলো অন্তর বুঝতে পারে এবং সত্তা তা সম্পাদন করতে পারে। যদিও আরো অনেক আছে উল্লেখ করার মত যেগুলো আয়ত্বে আনতে পারে শুধু তাঁর মুখলেস ও অত্যন্ত নিকট বান্দাহরা। নিশ্চয়ই তারা যাকাতের নেতা এবং তাদেরই আছে এ মর্যাদার চিহ্ন। হে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাকে সে জিনিসে সফলতা দিন যা আপনি ভালোবাসেন এবং যাতে আপনি সন্তুষ্ট হন।

নিয়ত

সে ব্যক্তির নিয়ত বিশুদ্ধ যার আছে সুস্থ অন্তর, কারণ সুস্থ অন্তর নিষিদ্ধ বিষয়ের চিন্তা  থেকে মুক্ত। তা আসে সব বিষয়ে একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার জন্য তোমার নিয়ত করা থেকে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন,“ সেদিন না সম্পদ না সন্তানাদি কোন কাজে আসবে, শুধু সে ছাড়া যে আসবে কদর্যতামুক্ত অন্তর নিয়ে।” (সুরা শু’আরা :৮৮-৮৯)

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “ বিশ্বাসীর নিয়ত তার কাজের চাইতে উত্তম।” এবং আরো বলেছেন,“ কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল, এবং প্রত্যেক ব্যক্তি তাই পাবে যা সে নিয়ত করেছিল।” তাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার বান্দাহর অবশ্যই খালেস নিয়ত থাকতে হবে প্রত্যেক ক্রিয়া ও স্থিরতার মুহূর্তে। কারণ সে ক্ষেত্রে সে উদাসীন থাকবে না। যারা উপেক্ষাকারী তারা তিরস্কৃত হয়েছে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন,“ তারা গবাদি পশুর মত ছাড়া আর কিছু নয়, না তারা পথ থেকে আরো দূরে সরে যাচ্ছে।” (সুরা ফুরকান : ৪৪)। 

তিনি আরো বলেছেন,“ এরা হচ্ছে উদাসীন।” ( সুরা আরাফ : ১৭৯)

নিয়ত আসে অন্তর থেকে জ্ঞানের বিশুদ্ধতা অনুযায়ী। এটি পরিবর্তিত হয় বিশ্বাস পরিবর্তনের সাথে সাথে। বিভিন্ন সময়ে এর শক্তি ও দুর্বলতার  তারতম্য হয়। যাদের খালেস নিয়ত রয়েছে তাদের স্বার্থপরতা ও কামনা-বাসনা পরাভূত হয়েছে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার তাসবীহ করার শক্তি ও তাঁর সামনে বিনয়ের কাছে। সে তার প্রকৃতি, তার ক্ষুধা এবং তার কামনা-বাসনার কারণে একটি অসুবিধার মধ্যে আছে তবুও অন্যরা তার কাছে স্বস্তি খুঁজে পায়।







Reactions

Post a Comment

0 Comments