পরিচ্ছদ : নয় ( বিনয়, মূর্খতা, খাদ্য গ্রহণ,শয়তানী কুমন্ত্রনা/ওয়াসওয়াসা)

বিনয়

বিনয় প্রত্যেক মর্যাদাপূর্ণ আসন ও স্থানকে জড়িয়ে ধরে। যদি বিনয়-এর কোন ভাষা থাকতো তাহলে তা বিভিন্ন বিষয়ের ফলাফলের ভিতরে লুকিয়ে থাকা বাস্তবতা সম্পর্কে বলতো। বিনয় হলো যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার জন্য এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার পথে করা হয়। এছাড়া আর যা আছে সব প্রতারণা। যে ব্যক্তি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রতি বিনয়ী, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাকে তাঁর অনেক বান্দাহর উপর স্থান দিবেন। বিনয়সম্পন্ন লোকদের চেনার মত অনেক নিদর্শন রয়েছে। যথন তাদের একজনকে বিনয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো সে বললো: “ এর অর্থ তুমি সত্যের প্রতি বিনয়ী হও এবং তা অনুসরণ করো, যদি তা তুমি কোন শিশুর কাছ থেকেও শোন।” অনেক ধরণের অহংকার জ্ঞানকে ব্যবহার,গ্রহন ও অনুসরণ করাতে বাধা দেয়। এ সম্পর্কে কিছু আয়াত আছে যেখানে দাম্ভিকদের নিন্দা করা হয়েছে যা আকাশের ফেরেশতারা ও পৃথিবীর ইরফানি (আধ্যাত্নিক) ব্যক্তিরা দেখে চিনতে পারে।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন,” সবচেয়ে উঁচু স্থানগুলোতে থাকবে ঐ সব মানুষেরা যারা সবাইকে জানবে তাদের চিহ্ন দেখে।” ( সূরা আ’রাফ ঃ ৪৬)

এবং অন্য জায়গায় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন, “ যে কেউ তোমাদের মধ্য থেকে তার বিশ্বাস থেকে ঘুরে যায়, তাহলে আল্লাহ এক গোষ্ঠিকে আনবেন যাদেরকে তিনি ভালোবাসবেন এবং তারা তাঁকে ভালোবাসে, বিশ্বাসীদের প্রতি বিনয়ী এবং কাফেরদের বিরুদ্ধে কঠিন।” ( সূরা মায়িদা ঃ ৫৪)

“ নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে সেই আল্লাহর কাছে সবচেয়ে সম্মানিত যে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে সতর্ক (মুত্তাক্বী)।” (সূরা হুজরাত : ১৩)

“ তোমাদের নিজেদের আত্মাকে পবিত্র বলো না।” ( সূরা নাজম ঃ ৩২)

বিনয়ের মূল আসে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার মহাসম্মান, ভয় এবং বিরাটত্ব অনুভব করা থেকে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কোন ইবাদতে সন্তুষ্ট নন এবং তা গ্রহন করেন না যা যদি না তা বিনয়ের সাথে আসে। বিনয়ের সত্যিকার অর্থ কেউ জানে না শুধু তারা ছাড়া যারা তাঁর নিকটবর্তী ও তাঁর একত্বের সাথে যুক্ত। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন, “ দয়ালু খোদার বান্দাহ হলো তারা যারা জমীনে হাঁটে বিনয়ের সাথে এবং যখন মূর্খরা তাদেরকে সম্বোধন করে বলেঃ সালাম।” (সুলা ফুরকান ঃ ৬৩)

তিনি তাঁর সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে শক্তিধর এবং এর জনগণের অভিভাবক মুহাম্মাদকে বিনয়ী বলেছেন এই বলে, “ বিশ্বাসীদের প্রতি বিনম্র হও।” ( সূরা হিজর ঃ ৮৮)

বিনয় থেকে জন্ম নেয় আত্মসমর্পণ, নম্রতা, ভয় ও ভদ্রতা; এ গুণগুলো কেবল বিনয়ের ভেতর থেকেই প্রকাশ পায়। সত্যিকার ও পরিপূর্ণ মর্যাদা শুধু তাদেরকেই দেওয়া হয় যারা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার পরম সত্তার প্রতি বিনীত।

মূর্খতা

মুর্খতা হলো একটি আঁকার যার গঠণ প্রকৃতি পৃথিবীর গঠন প্রকৃতির মতো। যখন তা সামনে এগিয়ে যায় তখন অন্ধকার দেখা দেয় এবং যখন তা পিছনে সরে আসে ্তখন আলো দেখা দেয়। আল্লাহর বান্দাহ-র সাথে একবার এদিক আরেকবার ওদিক করে , যেভাবে সূর্যের সাথে সাথে ছায়া একবার এদিক একবার ওদিক করে। তুমি কি মানুষের দিকে তাকিয়ে দেখ নি? কোন কোন সময় তুমি দেখ যে, সে নিজের গুণাবলী সম্পর্কে অজ্ঞ এবং সেগুলোর প্রশংসা করছে অথচ একই সময়ে সে অন্যের ভিতরে এগুলোর ভুল বের করছে এবং সেগুলোর সমালোচনা করছে। অন্য সময়ে দেখতে পাও যে, কোন ব্যক্তি তার নিজের প্রকৃতি জানে এবং এর সমালোচনা করছে এবং অন্যের ভিতরে এগুলোকে প্রশংসা করছে। সে নিরাপত্তা ও হতাশার ভিতর দুলে।যদি সে সততা ও নিরাপত্তা পায় সে ঠিক থাকে। আর যদি সে সাহায্যের অভাব দেখে এবং তাকে ছেড়ে যাওয়া হয় তাহলে সে ভুল করে। মূর্খতার চাবি হচ্ছে নিজ জ্ঞানের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা এবং এর উপরে পূর্ণ আস্থা রাখা। জ্ঞানের চাবি হচ্ছে এক স্তরের জ্ঞানের সাথে উচ্চতার স্তরের জ্ঞান বিনিময় করা ঐশী অনুগ্রহ ও পথ নির্দেশসহ। একজন মূর্খ ব্যক্তির সর্বনিন্ম গুণ হচ্ছে সে জ্ঞানের দাবি করে যা সে পাওয়ার যোগ্য নয়। তার সবচেয়ে সাধারণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তার অজ্ঞতা সম্পর্কে তার অজ্ঞতা এবং তার মূর্খতার চরম দিকটি হলো সে জ্ঞানকে প্রত্যাখ্যান করে। সব মূর্খলোক একই ধরনের।

খাদ্য গ্রহণ

অল্প খাবার সব মানুষের জন্যই সব ক্ষেত্রে প্রশংসনীয়, কারণ তা বাইরের ও ভেতরের সত্তার জন্য কল্যাণকর। খাওয়া তখন প্রশংসনীয় যখন তা করা হয় প্রয়োজনের কারণে, রিযক্ব-এর একটি মাধ্যম হিসেবে, যখন প্রচুর আছে অথবা পুষ্টির জন্য। প্রয়োজনে খাওয়া হলো বিশুদ্ধদের জন্য। খাওয়া একটি মাধ্যম ও মুত্তাক্বীদের জন্য রিযক্ব হলো সাহায্য। প্রচুর আছে এমন সময়ে খাওয়া হলো তাদের জন্য যারা আস্থা ( তাওয়াক্কুল) রাখে এবং পুষ্টির জন্য খাওয়া হলো বিশ্বাসীদের জন্য।

বিশ্বাসীদের অন্তরের জন্য প্রচুর খাওয়ার চাইতে আর কোন কিছু ক্ষতিকর নেই, কারণ তা দু’টো জিনিস ঘটায় - অন্তর কঠিন হয়ে যায় এবং কামনা-বাসনার উত্থান ঘটায়। ক্ষুধা বিশ্বাসীদের জন্য স্বাদ বৃদ্ধিকারী, রুহের পুষ্টি, অন্তরের জন্য খাবার এবং দেহের জন্য স্বাস্থ্য। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “ আদমের সন্তান তার পেটের চাইতে খারাপ কোন পাতিল ভরে না।”

দাউদ (আঃ) বলেছেন, “ এক লোকমা খাবার যা আমার প্রয়োজন তা রেখে দেওয়া বিশ রাত জেগে থাকার চেয়ে আমার কাছে বেশী পছন্দনীয়।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “ বিশ্বাসী খায় একটি পাকস্থলী ভরার জন্য এবং মোনাফেক্ব খায় সাতটি (পাকস্থলী) ভরার জন্য।”  এবং অন্য জায়গায় বলেছেন, “দুর্ভেোগ সে লোকদের জন্য যার দু’জায়গায় ফুলে - যখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো সেগুলো কী? তিনি বলেছেন, “ পাকস্থলী ও যৌনাঙ্গ।”

ঈসা (আঃ) বলেছেন, “ অন্তর-এর জন্য কাঠিন্যের চাইতে খারাপ রোগ আর নেই, এবং কোন আত্মা আর কোন কারণে বেশী দুর্বল হয়ে যায় নি যা ক্ষুধার অভাবে ঘটেছে। এ দু’টো হলো বহিষ্কৃত হওয়া ও হতাশ হওয়ার দুই চালক।”

শয়তানী কুমন্ত্রনা ( ওয়াস্ওয়াসা)

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার বান্দাহদের উপর শয়তান নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে যখন তারা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার স্মরণ পরিত্যাগ করে, দাম্ভিক হয়ে যায় এবং তার হারামের সম্মুখীন হলে নির্বিকার থাকে এবং ভুলে যায় সে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাদের গোপণ বিষয়গুলো দেখছেন।

কুমন্ত্রনা আসে অন্তরের বাইরে থেকে বুদ্ধির পরোক্ষ অনুমতিক্রমে এবং একে টিকিয়ে রাখে মানুষের নিজের প্রকৃতি; যখন তা অন্তরে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়   তখন ভুল, পথভ্রষ্টতা ও অবিশ্বাস দেখা দেয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা  তাঁর বান্দাহদের নিঃশব্দে ডেকেছেন এবং তাদেরকে ইবলিস - এর শত্রুতা সম্পর্কে বলেছেন, “ শয়তান তোমাদের শত্রু, তাই তাকে শত্রু হিসেবে নাও।” ( সূরা ফাতির ঃ ০৬) 

তার সাথে সে ব্যক্তির মতো হও যে রাখালের কুকুরের কাছে দাঁড়িয়ে আছে এবং কুকুর - এর মালিককে তার কাছ থেকে কুকুর সরিয়ে নওয়ার জন্য অনুরোধ করছে। বিষয়টি এরকমই যখন শয়তান তোমার কাছে কুমন্ত্রণা দিতে আসে তোমাকে সত্য পথ থেকে সরিয়ে নিতে এবং তোমাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার স্মরণ ভুলিয়ে দিতে।

তখন তার কাছ থেকে আশ্রয় চাও তোমার রব ও তার রবের কাছে। তিনি সত্যকে মিথ্যার বিরুদ্ধে রক্ষা করবেন যার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে তাকে সাহায্য করবেন, যেহেতু তিনি বলেন, “ নিশ্চয়ই তার  কোন ক্ষমতা নেই তাদের উপর যারা বিশ্বাস করে এবং তাদের রবের উপর নির্ভর করে।” ( সূরা নাহল ঃ ৯৯)

            মানুষ তখনই শুধু তা করতে পারবে যখন সে জানে কীভাবে সে আসে এবং জানে তার কুমন্ত্রণার পদ্ধতি কী - সার্বক্ষণিক সতর্কতা, খেদমতে আন্তরিকতা, সর্ব- সচেতন আল্লাহর ভয় এবং তাঁর বেশি বেশি স্মরণের মাধ্যমে।

আর যে ব্যক্তি সচেতন প্রহরায় তার সময় ব্যয় করতে অবহেলা করে, সন্দেহাতীতভাবে সে শয়তানের শিকারে পরিণত হবে। শয়তান ব্যক্তির নফস নিয়ে যা করে তা থেকে তার শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। সে একে পথভ্রষ্টতা, ধোঁকা এবং দাম্ভিকতার দিকে নেয়ে যায়; ঐ ব্যক্তিকে ধোঁকার মাধ্যমে তার নিজের কাজকর্ম, তার ইবাদত এবং তার অন্তরদৃষ্টিকে তার কাছে প্রশংসনীয় করে তোলে। 

তার প্রতি শয়তানের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের কারণে একটি অভিশাপ নেমে আসে তার জ্ঞান, তার ইরফান (আধ্যাত্মিক জ্ঞান) এবং তার যুক্তিবুদ্ধির ক্ষমতার উপর চিরকালের জন্য। অথচ যারা অবহেলা করে না তাদের উপর তার কোন ক্ষমতা নেই। তাই আল্লাহর দৃঢ়তম দড়ি ধরো, যার অর্থ হচ্ছে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে আশ্রয় চাওয়া এবং প্রত্যেক শ্বাসের সাথে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার পূর্ণ প্রয়োজন অনুভব করা। প্রতারিত হয়ো না যখন শয়তান তোমার আনুগত্যের কাজকর্মগুলোকে তোমার চোখে সুন্দর করে দেখায়; যদি সে তোমার কাছে কল্যাণের নিরানব্বইটি দরজা খুলে ধরে তা শুধু এজন্যই যে সে যেন তোমাকে পরাভূত করতে পারে একশতম দরজাটি খুলে ধরে।তাই তার মোকাবিলা করো বিরোধীতার মাধ্যমে, তার পথকে আটকে দাও এবং তার লোভ দেখানোকে প্রত্যাখ্যান করো।







Reactions

Post a Comment

0 Comments