পরিচ্ছদ : দশ (গর্ব, উদারতা,নিজের হিসাব নেওয়া)

গর্ব

গর্ব বিষয়টি অহমিকার সব দিক জড়িয়ে ধরে আছে, এগুলো তাদের মধ্যে পাওয়া যায় যারা তাদের কাজ-কর্ম নিয়ে গর্ব করে, তাদের শেষ পরিণতি কী হবে তা সর্ম্পকে খুব কমেই জেনে।যে-ই নিজেকে নিয়ে গর্ব করে তার কাজ সত্য পথ থেকে পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং সে তাই দাবী করে যা তার নয়।

কোন ব্যক্তি যদি কোন কিছু দাবী করে যাতে তার অধিকার নেই সে একজন মিথ্যাবাদী, যদি এমনও হয় যে সে দীর্ঘদিন তার দাবী গোপণ রাখে। গর্বকারী ব্যক্তির বেলায় যা প্রথমে ঘটে তা হলো তার গর্বের বিষয়টি তার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয় যেন সে জানতে পারে সে ঘৃণিত এবং অক্ষম; আর সে নিজের বিরুদ্ধেই নিজে সাক্ষী দিবে এবং তা হবে তার বিরুদ্ধে দৃঢ়তার প্রমাণ। এটি ঘটেছিল ইবলিসের বেলায়।

গর্ব একটি গাছ যার বীজ হলো অবিশ্বাস, যার মাটি হলো মোনাফেক্বি এবং এর পানি হচ্ছে সীমালঙ্ঘন।এর শাখাগুলো হলো অজ্ঞতা, এর পাতাগুলো হলো ভুলপথ এবং এর ফল হলো আগুনে চিরদিন থাকার অভিশাপ। যে গর্ব পছন্দ করলো সে অবিশ্বাসের বীজ বুনলো এবং মোনাফেক্বি চাষ করলো। অবশ্যম্ভাবী যে তা ফল দিবে এবং শেষ পর্যন্ত সে আগুনের ভিতর পড়বে।

উদারতা

উদারতা হলো রাসুলুল্লাহ (সাঃ) - এর প্রকৃতির একটি অংশ এবং বিশ্বাসের খুঁটি। একজন ব্যক্তি বিশ্বাসী হতে পারে না যদি না সে উদার হয়। অবশ্যই আরো যা থাকতে হবে তা হলো নিশ্চিত বিশ্বাস (ইয়াক্বীন) এবং উচ্চাকাঙ্খা (হিম্মহ), কারণ উদারতা হলো ইয়াক্বীন- এর একটি রশ্নি।প্রচেষ্টা তার জন্য সহজ  যে তার উদ্দেশ্য জানে।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “ আল্রাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার বন্ধু প্রকৃতিগতভাবেই উদার।” আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে প্রিয় প্রত্যেক ব্যক্তিকে উদারতা দান করা হয়েছে যাদের এ পৃথিবী থেকে সামান্য আছে।

উদারতার একটি নিদর্শন হচ্ছে এ পৃথিবীর সম্পদ এবং কে এর মালিক, বিশ্বাসী অথবা অবিশ্বাসী, অনুগত অথবা বিদ্রোহী এবং উচ্চ মর্যাদার বা নিম্ন শ্রেণির এসব সম্পর্কে আগ্রহের অভাব।উদার ব্যক্তি অন্যদের খাওয়ায় যখন সে নিজে ক্ষুধার্ত থাকে, সে অন্যদের পোশাক দান করে যখন সে নিজে খালি গায়ে থাকে, সে অন্যদের দেয় অথচ সে অন্যদের থেকে উপহার নিতে অস্বীকার করে। সে এর মাধ্যমে উপকৃত হয় এবং তার উদারতার মাধ্যমে সে অন্যদের ঋণী করে না। যদি সে সমস্ত পৃথিবীর মালিক হতো সে নিজেকে এর ভিতরে একজন বিদেশী হিসেবে দেখতো। যদি সে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার জন্য এক ঘন্টার ভিতরে এর পুরোটাই ব্যয় করে ফেলতো তবুও তার জন্য আফসোসের কারণ হতো না।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “ উদার ব্যক্তি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নিকটবর্তী, জনগণের নিকটবর্তী, জান্নাতের নিকটবর্তী, এবং আগুন থেকে অনেক দূরে। অন্যদিকে কৃপণ ব্যক্তি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার থেকে অনেক দূরে, জনগণের কাছ থেকে দূরে,জান্নাত থেকে দূরে এবং আগুনের কাছে।” একমাত্র ঐ ব্যক্তিকে উদার বলা যায় যে নিজেকে ব্যয় করে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে জানতে এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার জন্যে, যদি এমনও হয় তা একটি রুটি ও পানির মাধ্যমে।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আরো বলেছেন, “ যে ব্যক্তি উদার সে উদার ঐ বিষয়ে যার মালিক সে নিজে এবং এর মাধ্যমে সে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার চেহারা (পূর্ণ দৃষ্টি) আশা করে। আর যে ব্যক্তি উদার হওয়ার ভান করে এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে , সে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার শাস্তি  এবং ক্রোধ লাভকারী। সে সব মানুষের মধ্যে নিজের প্রতি সবচেয়ে কৃপণ, তাই অন্যদের প্রতি সে কেমন হবে, যখন সে তার নিজের কামনা-বাসনার অনুসরণ করে এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার আদেশের বিরোধীতা করে?” যেমনটি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন, “ অতি অবশ্যই তারা বহন করবে তাদের নিজেদের বোঝা এবং অন্য বোঝাগুলোও তাদের নিজেদের বোঝার সাথে।” ( সূরা আনকাবুত : ১৩)

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “ আদমের সন্তান চিৎকার করে বলে, ‘ আমার সম্পত্তি! আমার সম্পত্তি! আমার সম্পদ! আমার সম্পদ!’ হে হতভাগা, কোথায় ছিলে তুমি যখন ছিল সম্রাজ্য অথচ তোমার অস্তিত্ব ছিলো না? তুমি যা খাও ও পান করো অথবা যে পোশাক তুমি পরো ও তা ব্যবহারের মাধ্যমে ছিঁড়ে শেষ করো অথবা যা তুমি দান করো এবং যা তুমি টিকিয়ে রাখ তার চেয়ে বেশি কিছু কি আছে?” হয় তোমাকে এর মাধ্যমে দয়া করা হচ্ছে অথবা তোমাকে এর জন্য শাস্তি দেওয়া হবে। অতএব তোমার বুদ্ধি ব্যবহার করো এবং বুঝে নাও যে তোমার জন্য উচিত নয় নিজের সম্পত্তির চাইতে অন্যের সম্পত্তি বেশি ভালোবাসা।

বিশ্বাসীদের আমীর হযরত আলী (রা) বলেছেন, “ তুমি ইতোমধ্যে যা দিয়েছো তা তাদের জন্য নির্দিষ্ট ছিল যারা এখন তার মালিক; তুমি যা ধরে রেখেছো তা হলো তাদের জন্য যারা এর উত্তরাধিকারী হবে এবং তোমার এখন যা আছে এর উপর তোমার কোন ক্ষমতা নেই শুধু এর কারণে দাম্ভিক হওয়া ছাড়া। কত চেষ্টাইনা তুমি করো এ ‍পৃথিবী পাওয়ার জন্য , কৃতিত্ব দাবী করার জন্য! তুমি কি চাও নিজেকে দরিদ্র করতে এবং অন্যদের ধনী করতে?”

 নিজের হিসাব নেওয়া

যদি কোন ব্যক্তিকে তার নিজের হিসাব নিতে কোন কিছুই বাধ্য না করে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সামনে উপস্থিত হওয়ার লজ্জা এবং গোপন বিষয়গুলোর উপর থেকে পর্দা ছিঁড়ে নেয়ার বেইযযতি ছাড়া, তাহলে মানুষে পাহাড়ের চূড়া থেকে নিজেকে নিচে ফেলে দিতো এবং কোন বাড়িতে আশ্রয় নিত না, সে খেতোও না, পানও করতো না এবং ঘুমাতোও না শুধুমাত্র নিজের জীবন বাঁচানোর প্রয়োজন ছাড়া। মানুষ এরকম আচরণই করে যখন প্রত্যেক শ্বাস গ্রহনের সাথে সে কিয়ামত (পুনরুত্থান) দেখতে পায় এর আতঙ্ক ও দুঃখ-কষ্টসহ। সে তার অন্তরের ভিতরে সে সময়টিকে দেখতে পায় যখন সর্ববাধ্যকারী খোদার সামনে সে দাঁড়াবে এবং যখন সে নিজের হিসাব নেয় তখন সে যেন দেখতে পায় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সামনে তাকে ডাকা হয়েছে উপস্থাপনের জন্য এবং যেন তাকে মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্তে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে। 

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন, “ যদি সরিষা দানার ওজনেও হয়, তাও আমরা উপস্থিত করবো এবং আমরা হিসাব নেয়ার জন্য যথেষ্ট।” ( সূরা আম্বিয়া : ৪৭)

ইমামদের একজন (আঃ) বলেছেন, “ নিজের হিসাব নাও তোমাকে হিসাব দেওয়ার জন্য ডাকার আগেই। তোমার কাজ-কর্মকে তোমার লজ্জা পাওয়ার ভয়ের দাঁড়িপাল্লায় ওজন করো, তোমার জন্য তা ওজন করার আগেই।”

আবু যার বলেন, “ জান্নাতের উল্লেখ হচ্ছে মৃত্যু এবং জাহান্নামের আগুনের উল্লেখ করাতেও তাই। কী আশ্চর্য যে একজন ব্যক্তির সত্তা বাস করে দু’টি মৃত্যুর মাঝে।”

বর্ণিত আছে ইয়াহইয়া (আঃ) পুরো রাত ভাবতেন জান্নাত ও জাহান্নাম নিয়ে, এতে তার রাত কাটতো জাগ্রত অবস্থায় এবং তিনি ঘুমাতেন না।এরপর সকাল বেলায় তিনি বলতেন, “ হে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা, মানুষ কোথায় পালাবে? কোথায় মানুষ থাকতে পারে? হে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা, মানুষ পালাতে পারে শুধু তোমার কাছে।”




Reactions

Post a Comment

0 Comments