পরিচ্ছেদ : তেরো ( ঈর্ষা, লোভ, কলুষতা, সুস্থতা )

ঈর্ষা 

একজন ঈর্ষাপরায়ণ ব্যক্তি আগে নিজেরই ক্ষতি করে যার প্রতি সে  ঈর্ষাপরায়ণ তাকে ক্ষতি করার আগে, ঠিক যেমনটি ঘটেছিল ইবলিসের বেলায়। তার ঈর্ষার কারণে সে অভিশাপকে নিজের উপরে বয়ে এনেছিল, অথচ আদমের জন্য সে এনেছিলো তার নির্বাচন, হেদায়েত, প্রকৃত চুক্তির স্তরে আরোহণ এবং বাছাই হওয়া। অতএব তোমার প্রতি ঈর্ষা  করা হোক  ঈর্ষা কাতর হওয়ার চাইতে, কারণ  ঈর্ষা পরায়ণের শাস্তি সবসময় যাকে ঈর্ষা করা হয় তার চেয়ে বেশী; ‍এভাবেই রিযক (জীবনোপকরণ) নির্ধারণ হয়।

অতএব ঈর্ষাকারী ঈর্ষা থেকে লাভবান হয় এবং কীভাবে যাকে ঈর্ষা করা হয় তাকে ঈর্ষা ক্ষতি করে? ঈর্ষার শিকড় ক্বলবের অন্ধত্বে এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ্উপচে পড়া নেয়ামতকে প্রত্যাকখ্যান করার মাঝে নিহিত থাকে; এ দু’টো অবিশ্বাসের দু’টো পাখা। ঈর্ষার মাধ্যমে আদমের সন্তান সীমাহীন দুঃখ-কষ্টের ভেতর পড়ে এবং পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায় এবং নিজেকে সে কোনভাবে রক্ষা করতে পারে না। যে ঈর্ষাকারী সে প্রকৃতপক্ষে অনুতপ্ত হয় না, কারণ সে তার ঈর্ষাতে বসবাস করতেই থাকে এবং তার ঈর্ষাতে বিশ্বাস করে; নিশ্চয়ই এটি তার প্রকৃতির ভিতর মিশে আছে এবং তা নিজেকে অপ্রতিরোধ্যভাবে প্রকাশ করে কোন স্পষ্ট কারণ ছাড়াই, তার নিজের ক্ষতি করে। কোন ব্যক্তির মূল প্রকৃতির কোন পরিবর্তন হয় না, এমনকি চিকিৎসার মাধ্যমেও না।

লোভ

বলা হয়েছে যে কাব আল আহবারকে প্রশ্ন করা হয়েছিল বিশ্বাসের মধ্যে সবচেয়ে সুস্থ এবং সবচেয়ে কলুষিত জিনিস কী? সে উত্তর দিয়েছিলঃ সবচেয়ে সুস্থ জিনিস হলো সতর্কতা এবং সবচেয়ে কলুষিত হলো লোভ।

সম্পদের লোভ হচ্ছে শয়তানে মদ, যা সে নিজ হাতে তুলে দেয় তার পছন্দনীয়দের জন্য। যে এতে মাতাল হয় সে আল্লাহর শাস্তির ব্যাথ্যতেই শুধু ভদ্র হয় - যে তাকে এ পানীয় দিয়েছিল তার নিকটে অবস্থান করে। লোভের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে যদি কোন শাস্তি না থাকতো তাহলে শুধু বিশ্বাসের বদলে মানুষের এই পৃথিবী পছন্দ করার জন্য যে শাস্তি হতো , তাও হতো মারাত্মক। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন,

                      “ তারা হলো যারা সঠিক পথের বিনিময়ে  ভুল কিনে .....।” ( সূরা বাকারা ঃ ১৬)

বিশ্বাসীদের আমীর বলেছেন, “ তুমি যার প্রতি ইচ্ছা উদার হও, এতে তুমি হয়ে যাবে তার রাজপুত্র, যার কাছ থেকে ইচ্ছা সাহায্য প্রার্থনা করো এতে তুমি তার সমান হয়ে যাব্। তুমি যার প্রয়োজনে থাকো তার হাতে তুমি বন্দী।” যে লোভী তার কাছ থেকে বিশ্বাস কেড়ে নেওয়া হয় সে তা টেরও পায় না।কারণ বিশ্বাস বান্দাহকে সৃষ্টিগতভাবে লোভী হতে বাধা দেয়। তিনি আরও বলেছেণ, “ হে আমার ব্ন্ধু, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ভাণ্ডার সম্মানের পদক দিয়ে পূর্ণ এবং যে ভালো আচরণ করে তাকে পুরস্কৃত করতে তিনি অবহেলা করেন না।”

মানুষের যা আছে তা কলংকিত হয় ত্রুটি দিয়ে। বিশ্বাস তাকে উদ্বুদ্ধ করে আল্লাহর উপর আস্থা রাখতে, মধ্যপন্থায়, কামনা-বাসনা পরিত্যাগে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার আনুগত্যকে আঁকড়ে থাকতে  এবং জনগণের বিষয়ে নিরাশ হতে। যদি সে তা করে তাহলে সে তার বিশ্বাসের কাছেই আছে এবং সঠিক পথ অবলম্বন করেছে। যদি সে তা না করে তাহলে বিশ্বাস তাকে ছেড়ে যায় এবং তাকে তার খারাপ প্রকৃতির কাছে ফেলে যায়।

কলুষতা

বাইরের সত্তায় কলুষতা আসে ভেতরের কলুষতা থেকে। যদি তুমি তোমার ভেতরের গভীরতম সত্তাকে ঠিক করো তাহলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তোমার বাইরের সত্তাকে ঠিক করে দিবেন; যদি তুমি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে ভেতরে ভয় করো তাহলে তিনি জনগণের সামনে তোমার চাদর ছিড়বেন না। কিন্তু যে ভিতরে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাকে বাইরে প্রকাশ করে দেবেন। সবচেয়ে বেশিী কলুষতা জন্ম হয় দীর্ঘ আশা, লোভ এবং গর্ব থেকে যেভাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদেরকে ক্বারুনের ঘটনা বলেছেন, 

“ পৃথিবীতে ফাসাদ (কলুষতা) সৃষ্টির সুযোগ খুঁজো না; নিশ্চয়ই আল্লাহ ফাসাদ (কলুষতা) সৃষ্টিকারীদের ভালোবাসেন না।” ( সূরা কাসাস ঃ ৭৭)

তিনি অন্যত্র বলেছেন, “ আখেরাতের বাসস্থান, আমরা তা তাদেরকেই শুধু দিই যাদের ইচ্ছা নেই এ পৃথিবীতে গর্ব করার এবং ফাসাদ (কলুষতা সৃষ্টি) করার এবং সমাপ্তি ভালো তাদের যারা মুত্তাক্বী ( সতর্কতা অবলম্বনকারী)।”

                                                                                                                                        ( সূরা কাসাস ঃ ৮৩)

এ ত্রুটিগুলো আসে তা থেকে যা ক্বারুন করতো ও বিশ্বাস করতো। কলুষতার মূল নিহিত আছে এ পৃথিবীর ভালোবাসায়, এর সম্পদ জমা করায়, নিজের নফসকে অনুসরণ করায়, এর ক্ষুধাকে বৃদ্ধি করায়, প্রশংসা পছন্দ করায়, শয়তানের সাথে একমত হওয়ায় এবং তার পদাঙ্ক অনুসরণ করায়; এ সবগুলো দোষ যুক্ত হয় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রতি কোন মনোযোগ না দেয়া পছন্দ করায় এবং তাঁর দানসমূহ ভুলে যাওয়ায়।

অতএব, তোমার উচিত মানুষজনের কাছ থেকে পালিয়ে যাওয়া, এ পৃথিবীকে প্রত্যাখ্যান করা, তোমার বিশ্রামের মাঝে বাধা দেয়া, তোমার সাধারণ অভ্যাসগুলোর সাথে সম্পর্ক ছেদ করা, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে সর্বক্ষণ স্মরণ করার মাধ্যমে দুনিয়ার ক্ষুধাগুলোর উৎসকে গোড়া থেকে কেটে ফেলা এবং তাঁর আনুগত্যকে আঁকড়ে থাকা; এবং লোকজনের বিরূপ মনোভাব, কোন সাথীর অতিরিক্ত নির্ভরতা এবং তোমার পরিবার ও আত্মীয়দের শত্রুতা সহ্য করা। যদি তুমি তা করো তাহলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার দয়ার দরজা তোমার জন্য খোলা হবে, যেহেতু তোমার প্রতি তাঁর আছে ভালো মনোভাব, ক্ষমা এবং রহমত। এতে তুমি কথা অগ্রাহ্যকারীদের দল পরিত্যাগ করবে এবং শয়তানের হাতে বন্দী থাকা তোমার অন্তরকে মুক্ত করবে। তুমি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার দরজায় উপস্থিত হবে তাদের সাথে যারা তাঁর কাছে আসে এবং তুমি এমন এক পথে ভ্রমণ করবে যাতে তুমি আশা করতে  পারো তুমি পাবে পরম মর্যাদাবান, পরম সম্মানিত, পরম উদার ও পরম করুনাময়ের কাছে আসার জন্য অনুমতি।

সুস্থতা

যেখানেই তুমি থাকো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে সুস্থতা চাও প্রত্যেক অবস্থায়, তোমার বিশ্বাসের জন্য, তোমার অন্তরের জন্য এবং তোমার সর্বশেষ পরিণতির জন্য। যে তা চায় সে সব সময় তা পায় না।

তাহলে কীভাবে কিছু লোক পারে নিজেদেরকে দুঃখ কষ্টের মুখোমুখি করতে, সুস্থতার উল্টো পথে চলতে এবং এর নীতিগুলোর বিরোধিতা করতে, নিরাপত্তাকে ধ্বংস ও ধ্বংসকে নিরাপত্তা ভেবে?

প্রত্যেক যুগেই সুস্থতাকে মানুষের কাছ থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে এই যুগে; তবুও তা আবার খুঁজে পাওয়া যাবে অন্য মানুষের অপছন্দ এবং এমনকি আঘাত সহ্য করার মাধ্যমে, দূর্যেোগের মুধে ধৈর্য ধরার মাধ্যমে, মৃত্যুকে হালকাভাবে নিয়ে, যা কিছু ঘৃণ্য তা থেকে পালিয়ে গিয়ে এবং সামান্য বস্তুগত সম্পদ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকার মাধ্যমে। যদি তুমি সেরকম না হও তাহলে তোমাকে অবশ্যই নিজেকে গুটিয়ে নিতে হবে। যদি তুমি তা না করতে পারো তাহলে নিরব থাকো, যদিও নিরবতা নিজেকে গুটিয়ে নেয়ার মত নয়। যদি তুমি নিরব না হতে পারো তাহলে তা বলো যা তোমাকে সাহায্য করবে এবং তোমার ক্ষতি করবে না; কিন্তু তা নিরবতার মত নয়।যদি তুমি তা করার জন্য কোন উপায় না দেখ, তাহলে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ঘুরে বেড়াও, নিজের নফসকে নিয়ে যাও আগে যাওনি এমন এলাকায়, বিশুদ্ধ ‍উদ্দেশ্য, বিনীত অন্তর ও দৃঢ় দেহ নিয়ে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন, 

“ নিশ্চয়ই যারা নিজেদের উপর জুলুমকারী, তাদের প্রাণ হরণের সময় ফেরেশতারা বলেঃ ‘ তোমরা কী অবস্থায় ছিলে?’ তারা বলেঃ ‘আমরা (আমাদের) দেশে দুর্বল ছিলাম’ তারা বলবেঃ‘ আল্লাহর পৃথিবী কি প্রশ্স্ত ছিল না যে তোমরা সেখানে হিজরত করতে পারতে ... “ ( সূরা নিসা ঃ ৯৭)

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সৎকর্মশীল বান্দাহদের সে চরিত্র গ্রহন করো।

অস্পষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে সংগ্রাম করো না, এবং পরস্পর বিরোধী বিষয় নিয়েও সন্তুষ্ট থেকো না। যদি কেউ তোমাকে বলে,‘আমি’ বলো ‘তুমি’। কোন বিষয়ে জ্ঞানের দাবি করো না, যদি সে বিষয়ে তুমি বিশেষজ্ঞ হও। তোমার গোপন বিষয় শুধু তার কাছেই উন্মুক্ত করো যে তোমার চেয়ে বিশ্বাসে উন্নত। এভাবে তুমি সম্মান পাবে। যদি তুমি এটি করো তাহলে তুমি সুস্থতা পাবে এবং তুমি থাকবে মহান আল্লাহর সাথে অন্য কিছুর সাথে সংযুক্ত না থেকে।

Reactions

Post a Comment

0 Comments