পরিচ্ছেদ : ষোলো (পবিত্রতা অর্জন, মসজিদে প্রবেশ করা, দোয়া)


পবিত্রতা অর্জন

যদি তুমি পবিত্র হতে চাও এবং অযু করতে চাও, তাহলে পানির কাছে সেভাবে যাও যেভাবে তুমি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার রহমতের কাছে যেতে চাইতে, কারণ তিনি পানিকে তাঁর সাথে নিবিড় কথোপকথনের জন্য তাঁর কাছে যাওয়ার চাবি বানিয়েছেন এবং একে করেছেন তাঁর দাসত্বের রাজ্যে প্রবেশ করার পথপ্রদর্শক হিসেবে। ঠিক যেভাবে আল্রাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার রহমত তাঁর বান্দাহদের অন্যায় কাজগুলোকে ধুয়ে ‍মুছে দেয়, ঠিক সেভাবেই বাইরের অপবিত্রগুলো পরিস্কার হয় একমাত্র পানি দিয়ে। যেভাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন, “ তিনি বাতাসকে পাঠান সুসংবাদ হিসেবে তাঁর রহমতের আগে এবং আমরা আকাশ থেকে পবিত্র পানি বর্ষণ করি।” ( সূরা ফুরকান ঃ ৪৮)

অন্য জায়গায় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন, “ আমরা প্রত্যেক জীবিত প্রাণীকে সৃষ্টি করেছি পানি থেকে। তাহলেও কি তারা বিশ্বাস করবে না?” ( সূরা আম্বিয়া ঃ ৩০)

যেভাবে তিনি জীবন দেন প্রত্যেক নেয়ামতকে পানি থেকে, সেভাবেই তাঁর রহমত এবং উপচে পড়া দানের মাধ্যমে তিনি জীবন দেন অন্তরকে এবং আনুগত্যের কর্মকাণ্ডকে এবং এ চিন্তাভাবনাকে যে, পানির পবিত্রতা,পেলবতা, এর পরিচ্ছন্নতা, এর উপকারিতা এবং কীভাবে তা সব কিছুর সাথে সুক্ষ্মভাবে মিশে যায়; পানির মাধ্যমে তিনি অন্তরকে জীবন দেন যখন তুমি তোমার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোকে পবিত্র করো যেগুলোকে পবিত্র করার জন্য আল্রাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তোমাকে আদেশ করেছেন এবং যেগুলোকে তুমি ব্যবহার করো ফরজ ও সুন্নত নামাযের সময়।

প্রত্যেক অঙ্গ থেকে আসে অনেক উপকারিতা। যখন তুমি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে শ্রদ্ধার চোখে দেখবে তখন তাদের উপকারিতা তোমার জন্য শীঘ্র উথলে উঠবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সৃষ্টির সাথে আচরণ কর পানির মত যা সব জিনিসের সাথে মিশে যায় এবং যা প্রাপ্য তা সব দিয়ে দেয় অথচ তার মূল সত্তায় কোন পরিবর্তন ঘটে না।এ জিনিসটি প্রকাশ পেয়েছে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) - এর কথায়ঃ “ আন্তরিকভাবে বিশ্বাসী ব্যক্তি হলো পানির মত।” তোমার সব আনুগত্যে আল্লাহর সাথে তোমার পবিত্রতাকে সেই পানির পবিত্রতার মত করে নাও যা তিনি আকাশ থেকে বর্ষণ করেছেন এবং একে পবিত্র আখ্যা দিয়েছেন। তোমার অন্তরকে পবিত্র করো সতর্কতা ও ইয়াক্বীন দিয়ে যখন তুমি তোমার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে পবিত্র করো পানি দেয়ে।


মসজিদে প্রবেশ করা

যথস তুমি মসজিদের দরজায় পৌছাও, জেনো যে তুমি এক মহা শক্তিধর বাদশাহর দরজায় এসেছো। শুধু পরিশুদ্ধরাই তাঁর গালিচায় পা রাখে এবং শুধু সত্যিকার বিশ্বাসীরাই তাঁর সাথে বসার অনুমতি পায়। তাই এই মহা ক্ষমতাবান বাদশাহর দরবারে এগিয়ে যাওয়ার সময় সাবধান হও। কারণ তুমি বিরাট বিপদে পড়বে যদি তুমি উদাসীন হও। জেনে রাখো যে তিনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন ন্যায় বিচারে এবং ্উপচে পড়া নেয়ামতসহ তোমার দিকে ঝোঁকেন তাহলে তিনি তোমার আনুগত্যের সামন্য অংশকে  গ্রহন করেছেন এবং এর জন্য তোমাকে দিয়েছেন বিরাট পুরস্কার। যদি তিনি তাঁর প্রতি সত্যবাদিতায় এবং আন্তরিকতায় তাঁর প্রাপ্য দাবি করেন তোমার প্রতি তাঁর ন্যায় বিচারের মাধ্যমে, তাহলে তিনি তোমাকে পর্দায় ঢেকে দিয়েছেন এবং তোমার আনুগত্যকে প্রত্যাক্ষান করেছেন যদিও তোমার আনুগত্য ছিল অনেক। তিনি করেন যা তার ইচ্ছা। তাঁর সামনে তোমার অক্ষমতা, স্বল্পতা, দুর্বলতা এবং দারিদ্র্য স্বীকার করো, কারণ তুমি তাঁর দিকে ফিরেছো তার ইবাদত করার জন্য এবং তাঁর কাছে যাওয়ার জন্য। তাঁর দিকে ফিরো এবং জেনে রাখো যে, কোন প্রাণীর গোপন অথবা প্রকাশ্য বিষয়ের কোন কিছুই তাঁর কাছ থেকে লুকায়িত নয়।তাঁর সামনে তাঁর বান্দাহদের মধ্যে সবচেয়ে দরিদ্র বান্দাহর মত হও, তোমার অন্তরকে সব চিন্তা থেকে মুক্ত করো যা তোমাকে তোমার রবের কাছ থেকে ঢেকে ফেলতে পারে। কারণ তিনি শুধু তাদেরকে গ্রহন করেন যারা দরিদ্রতম ও আন্তরিক। দেখার চেষ্টা করো কোন খাতায় তোমার নাম লেখা হবে।

যদি তুমি তাঁর একান্ত আলাপচারিতার মিষ্টতার স্বাদ এবং তোমাকে তাঁর সম্বোধনের আনন্দ পাও, এবং তাঁর রহমতের পেয়ালা থেকে পান করো এবং যে নেয়ামত তিনি তোমাকে দান করেছেন এবং তোমার যে অনুরাধগুলো তিনি গ্রহন করেছেন, তাহলে তুমি তাঁর দাসত্ব যথাযথভাবে করেছো এবং ‍তুমি হয়তো তাঁর অনুমতি ও নিরাপত্তা বলয়ে প্রবেশ করবে। যদি তা না হয় তাহলে তার মতো দাঁড়াও যার শক্তি ও ক্ষমতা কেটে ফেলা হয়েছে এবং যার নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে েএসেছে। যদি সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালা জানতে পারেন যে তোমার অন্তরে তুমি আন্তরিকভাবে তাঁর কাছে আশ্রয় চাচ্ছো তাহলে তিনি তোমাকে স্নেহ, করুণা ও দয়ার সাথে বিবেচনা করবেন। তিনি তোমাকে সে বিষয়ে সফলতা যা তিনি ভালোবাসেন এবং যা তাঁর জন্য প্রীতিকর, কারণ তিনি উদার। তিনি ভালোবাসেন অতি উদারতা এবং তাদের ইবাদত যারা তাঁর প্রয়োজন বোধ করে এবং তাঁর সন্তুষ্টি ভিক্ষা চেয়ে তাঁর দরজায় পুড়ছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন, “ কে দুর্দশাগ্রস্তকে সাড়া দেন যখন সে তাঁকে ডাকে এবং দূর করে দেন খারাপকে?” (সূরা নামল ঃ ৬২)


দোয়া

দোয়ার সৌজন্য পালন করো। ভেবে দেখ কাকে তুমি ডাকছ, কীভাবে তাঁকে ডাকছো এবং কেন তাকে ডাকছো;পূর্ণব্যক্ত করো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার বিশালতা ও পরম মর্যাদাকে। তোমার অন্তর দিয়ে দেখো কীভাবে তিনি জানেন তোমার বিবেকের ভিতর কী আছে, কীভাবে তিনি দেখেন তোমার গোপন সত্তাকে এবং দেখেন এতে যা ঘটে গেছে এবং যা ঘটবে- সত্য ও মিথ্যা দু’টোই। তোমার নাজাত এবং তোমার ধ্বংসের পথকে জেনে নাও যেন ‍তুমি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে এমন কিছুর জন্য না ডাকো যার ভিতরে নিহিত আছে তোমার ধ্বংস অথচ তুমি মনে করছো সেখানে তোমার নাজাত রয়েছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন, “ মানুষ খারাপের জন্য দোয়া করে যেভাবে তার উচিত ভালোর জন্য দোয়া করা এবং মানুষ খুব তাড়াহুড়োপ্রবণ।” ( সূরা বনী ইসরাইলঃ১১) 

কী তুমি চাইছো এবং কেন তাহা চাইছো তা নিয়ে ভাবো; দোয়া হওয়া উচিত সত্যের প্রতি তোমার পক্ষ থেকে পূর্ণ সাড়া এবং তোমার অন্তর গলে যাওয়া তোমার রবের কথা ভেবে। তার উচিত সব পছন্দ পরিত্যাগ করা এবং সব বিষয়কে আল্লাহর প্রতি সমর্পণ করা - প্রকাশ্য ও গোপন উভয়কেই। যদি দোয়ার পূর্বশর্তগুলো পালন করা না হয় তাহলে তা কবুল হওয়ার কথা ভেবো না, কারণ তিনি জানেন কী গোপন ও কী লুকায়িত আছে; তুমি হয়তো তাঁর কাছে কিছু চাইছো  যখন তিনি জানেন তুমি ঠিক এর উল্টোটি গোপন করছো।

সাহাবীদের একজন অন্যজনকে বললো, “ তোমরা বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছো আর আমি অপেক্ষা করছি পাথরের (বৃষ্টি) জন্য।” জেনে রাখ যদি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদেরকে আদেশ না করতেন তাকে ডাকার জন্য  তিনি কখনই আমাদের নামাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে দোয়া কবুল করতেন না। তাহলে তাঁর দান কত বড় যে তিনি সাড়া দেওয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছেন যদি কেউ দোয়ার পূর্বশর্তগুলো পূরণ করে।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করা হলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সবচেয়ে শক্তিশালী নাম কী? তিনি বললেন, “ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রত্যেকটি নামই সবচেয়ে শক্তিশালী।”

 তোমার অন্তরকে তিনি ছাড়া আর সবকিছু থেকে মুক্ত করো এবং তাঁকে ডাকো সে নামে যা তোমার পছন্দ। বাস্তবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার একটিই নাম তা নয় ঃ তিনি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা, এক ও সর্বশক্তিমান।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কোন ভ্রুক্ষেপহীন অন্তরের দোয়াতে সাড়া দেন না।” যখন তোমাদের মধ্যে কেউ চায় তার রব তাকে দিক যা সে তাঁর কাছ থেকে চেয়েছে তাহলে তার উচিত সব মানুষকে পরিত্যাগ করা - একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রতি আশা স্থাপন করা। যখন আল্লাহ তার অন্তরে সেটি দেখেন তখন তিনি তাই দিবেন যা সে চায়।

যখন তুমি দোয়ার পূর্বশর্তগুলি প্রতিষ্ঠা করেছো যা আমি উল্লেখ করেছি এবং তোমার গভীরতম সত্তার ভিতরে তাঁর জন্য আন্তরিক হয়েছো, তাহলে সুসংবাদে আনন্দ করো যে তিনটি জিনিসের  যে কোন একটি ঘটবে ----

ক) হয় তিনি দ্রুত দিবেন যা তুমি চেয়েছো। অথবা

খ) তিনি তোমার জন্য তার চেয়ে ভালো কিছু জমা রাখবেন। অথবা

গ) তিনি তোমার কাছ থেকে একটি দুর্দশা হটিয়ে দিবেন যা তিনি পাঠালে তোমাকে ধ্বংস করে দিত।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন, “ যদি কোন ব্যক্তি আমার কাছে চাওয়ার সময় আমাকে স্মরণ করার কারণে তা ভুলে যায় তাহলে আমি তাকে তার চাইতে ভালো কিছু  দিবো যা আমি তোমাদেরকে দেই যারা চায়।”

আমি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে একবার ডাকলাম এবং তিনি সাড়া দিলেন। আমি আমার প্রয়োজন ভুলে গেলাম কারণ যথন তিনি কোন দোয়ার উত্তর দেন তাঁর দান হয় আরও বড় এবং আরও উচ্চমূল্যের তার চাইতে যা বান্দাহরা তাঁর কাছে চায়, যদি তা জান্নাত ও তার চিরস্থায়ী নেয়ামতও হয়। এটি শুধু যারা কাজ করে সেই প্রেমিকরা, আধ্যাত্মিক ব্যক্তিরা, ্উচ্চস্থানীয়রা এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নির্বাচিত ব্যক্তিরা বুঝতে পারে।

Reactions

Post a Comment

0 Comments