পরিচ্ছেদ : সতেরো (রোযা রাখা, বিরত থাকা, এ পৃথিবীর একটি বর্ণনা)

 

রোযা রাখা

রাসূল (সাঃ)-বলেছেণ, “রোযা এ পৃথিবীর দুঃখ-কষ্টের বিরুদ্ধে একটি নিরাপত্তা এবং আখিরাতে শাস্তি থেকে বাঁচার পর্দা।” যখন তুমি রোযা রাখো তখন নিয়ত করো যে এর মাধ্যমে তুমি শরীরের মাংসের ক্ষুধাগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করবে এবং পৃথিবীর সে সব কামনা-বাসনাকে কেটে ফেলবে যা শয়তান ও তার ;মতো বুদ্ধি থেকে আসে। নিজেকে একজন অসুস্থ ব্যক্তির অবস্থায় রাখো যে না চায় খাবার, না চায় পানি; আশা করো যেন যে কোন মুহুর্তে অন্যায় কাজের অসুস্থতা থেকে আরোগ্য লাভ করতে পারো। তোমার অভ্যন্তরীণ সত্তাকে পবিত্র করো প্রত্যেক মিথ্যা, নোংরা-কাদা, উদাসীনতা এবং অন্ধকার থেকে যা তোমাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রতি আন্তরিক হওয়া থেকে কেটে দেয়।


কোন এক সাহাবীকে একজন বলেছিল, “ তুমি ইতোমধ্যেই দুর্বল, রোযা তোমাকে আরও দুর্বল করে দেবে।” সে বললো, “ আমি এ রোযাকে প্রস্তুত করছি  এক লম্বা দিনের খারাপ-এর বিরুদ্ধে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে মেনে চলার পথে ধৈর্য তাঁর শাস্তিতে ধৈর্য ধরার চাইতে উত্তম।” রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কথা উদ্ধৃত করেছেন, “ রোযা আমার জন্য রাখা হয় এবং আমি এর প্রতিদান।”


            রোযা নফসের কামনা-বাসনা এবং লোভের ক্ষুধাকে হত্যা করে এবং এ থেকে আসে অন্তরের পবিত্রতা, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের পরিশুদ্ধতা, ভেতরের ও বাইরের সত্তার আবাদ, নেয়ামতের জন্য কৃতজ্ঞতা, দুরিদ্রের জন্য দান, বিনয়পূর্ণ প্রার্থনার বৃদ্ধি, অন্তর গলে যাওয়া, কান্না এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে আশ্রয় নেয়ার সব পথ। এটি উচ্চাশা ভঙ্গের, খারাপ জিনিসগুলোর বোঝা লাঘব এবং ভালো কাজ দ্বিগুণ হওয়ার কারণ। এর ভেতরে এত নেয়ামত যে তা গোনা যায় না। এটি যথেষ্ট যে আমরা সেগুলোর কিছু উল্লেখ করেছি সে ব্যক্তির জন্য যে বোঝে এবং যাকে রোযার কল্যাণ লাভ সফলাত দেওয়া হয়েছে, যদি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ইচ্ছা করেন।


বিরত থাকা

‘বিরত থাকা’ হলো আখেরাতের চাবি এবং জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি।এর ভেতরে আছে যা কিছু আল্রাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার দিক থেকে তোমার মনোযোগ কেড়ে নেয় কোন দুঃখ ছাড়া সে সব পরিত্যাগ করা বা এজন্য গর্ববোধ না করা, বা তা পরিত্যাগ করার কারণে স্বস্তি লাভের অপেক্ষা না করা, বা তার জন্য কোন প্রশংসা না খোঁজা। নিশ্চয়ই বিরত থাকা অর্থ হচ্ছে এ সব জিনিসকে ব্যক্তি সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় মনে করে। সে মনে করে এগুলো তার পাশ কাটিয়ে যাওয়া তার জন্য স্বস্তি ও আরাম, এবং তাদের উপস্থিতি তার জন্য দুর্ভোগ; এভাবে সে সব সময় দুর্ভোগ থেকে পালায় এবং যা তাকে স্বাচ্ছন্দ্য ও স্বস্তি এনে দেয় তার সাথে লেগে থাকে।যে ব্যক্তি বিরত থাকে সে আখেরাতকে বেছে নিয়েছে। সে বেছে নিয়েছে শক্তি ও এ পৃথিবীর বদলে মর্যাদাশূণ্যতাকে, বিশ্রামের বদলে সংগ্রামকে, ভর পেটের বদলে ক্ষুধাকে, কল্যাণকে যা আসবে নিকট পরীক্ষার পর দেরীতে এবং ভ্রুক্ষেপহীনতার বদলে স্মরণকে।তার সত্তা এ পৃথিবীতে, আর তার অন্তর আখিরাতে।


রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “ এ পৃথিবীর ভালোবাসা প্রত্যেক ভূলের ঝর্ণা।” এবং অন্য জায়গায় বলেছেন, “ এ পৃথিবী একটি লাশ, যে একে চায় সে একটি কুকুরের মত।” তুমি কি দেখো না তা কীভাবে সেটি ভালোবাসে যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ঘৃণা করেন? এ ভুলের চেয়ে বড় অপরাধ আর কি আছে?


                রাসূলুল্লাহ (সাঃ) - এর পরিবারের একজন বলেছেন, “ যদি এ সম্পূর্ণ পৃথিবী একটি শিশুর মুখের ভিতরে একটি লোকমা হতো তাহলে আমরা তার উপরে করুণা করতাম।তাহলে তার অবস্থা কী যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সীমানাকে পেছনে ছুঁড়ে ফেলে এ পৃথিবীকে চায় ও আকাঙ্খা করে? যদি এ পৃথিবী থাকার জায়গা হিসেবে ভালো হতো তাহলে তা তোমাকে করুণা করতো না, না তোমার ডাকে সাড়া দিতো এবং না তোমাকে প্রস্থানের সময়  বিদায় সম্বর্ধনা জানাতো।?


  রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “ যখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এ পৃথিবী সৃষ্টি করলেন তিনি একে আদেশ করলেন তাকে মানার জন্য এবং সে তার রবকে মান্য করলো। তিনি একে বললেন, “ তার বিরোধীতা করো যে তোমাকে চায় এবং তাকে সহায়তা দাও যে তোমার বিরোধীতা করে।” এটি তাই করে যা আল্লাহ সুবহানাহু ্ওয়া তায়ালা একে করতে দায়িত্ব দিয়েছেন এবং তিনি যা এর প্রকৃতির উপরে ছাপ মেরে  দিয়েছেন। 


এ ‍পৃথিবীর একটি বর্ণনা

এ পৃথিবী একটি দেহের মতো যার মাথা হচ্ছে অহংকার, যার চোখগুলো হচ্ছে সম্পদের তীব্র লালসা, যার কানগুলো হচ্ছে লোভ, যার জিহ্বা হচ্ছে প্রতারণা, যার হাত হচ্ছে আশা, যার পাগুলো হচ্ছে আত্ম-অহঙ্কার, যার অন্তর হচ্ছে উদাসীনতা, যার সত্তা হচ্ছে ধ্বংস, যার উৎপাদিত পণ্য হলো চিরতরে হারিয়ে যাওয়া।


            যে একে ভালোবাসে এটি তাকে অহংকার এনে দেয়, যে একে পছন্দ করে তাকে সম্পদের তীব্র লোভ এনে দেয়, যে একে চায় তাকে লোভ এনে দেয় এবং যে একে প্রশংসা করে তাকে মোনফেক্বীর পোশাক পরিয়ে দেয়। যে একে আশা করে তাকে আত্ম-অহংকারের শক্তি এনে দেয়; যে এর উপর নির্ভর করে তার ভিতরে উদাসীনতা সৃষ্টি করে। যে এর ভালোকে প্রশংসা করে এটি তাকে লোভ দেখিয়ে ফাঁদে ফেলে, কিন্ত ঐ সব ভালো তার জন্য টিকে থাকে না। যে ব্যক্তি একে জমা করে এবং একে নিয়ে কৃপণতা করে এটি তাকে ফেরত পাঠায় তার নিজ ঠিকানায় যা হলো জাহান্নামের আগুন।

Reactions

Post a Comment

0 Comments